পাবনায় আওয়ামীলীগ নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দোকান-বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর

পাবনায় আওয়ামীলীগ নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দোকান-বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর

ছবি : প্রতিনিধি

পাবনায় আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি সদস্যের হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী দোকানপাট, বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করেছে। বিক্ষোভকারীরা প্রায় ২০টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। ৫টি বাড়িসহ গোডাউনে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় বিক্ষোভকারীদের নিবৃত করতে গেলে তাদের ছোঁড়া ইটপাটকেলে ৩ জন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার দুপুরে নিহত বকুল শেখের জানাযা ও দাফন শেষে ফেরার পথে শহরের অনন্ত মোড় এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় অন্তত: ২০টি দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট চালায় তারা। এছাড়াও ৫টি বাড়ি ও গোউাউনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। হামলাকারীদের ছোঁড়া ইট পাটকেলে ৩ পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পাবনায় দোগাছি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর ও একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বকুল শেখকে শুক্রবার রাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার  বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েক হাজার মানুষ। এতে নারীরাও অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহরের প্রধান সড়কে জেলা আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে সড়ক অবরোধ করে। এসময় বক্তারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

পথসভায় বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু, দোগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাবনা শহরের অনন্ত মোড়ের সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোবাইকের চাঁদা তোলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোখলেস প্রামাণিক ও তার ভাই রানা। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসীকে নিয়ে সম্প্রতি চাঁদাবাজি বন্ধ করে অটোস্ট্যান্ড তুলে দেন বকুল শেখ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বকুলকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এদিকে এ হত্যার পর এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পাবনা থানার ওসি মোহাম্মদ নাছিম আহম্মেদ জানান, অনন্ত বাজার এলাকার টেম্পো ও সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে মোখলেছ প্রামাণিক গ্রুপ এবং বকুল শেখ গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল চলছিল। তারই জের ধরে এই হত্যাকানইট।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম জানান, নিহতের দাফন-কাফন শেষে মুসল্লিরা ফেরার পথে অনন্ত বাজার এলাকায় আসার পর ভেতরে থাকা কিছু দুস্কৃতকারী লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে দোকানপাটে ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নিহতের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আইনজীবী আবদুল আহাদ বলেন, অনন্ত বাজার মোড়ে একটি চক্র বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি করত। তিন দিন আগে বকুল শেখ সে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেন। এর জের ধরেই তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বকুল শেখ অনন্ত বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ছয় থেকে সাতজনের একদল দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কোপায় ও গুলি করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বকুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যার ঘটনায় শনিবার রাতে পাবনা সদর থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।