গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা : পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে যেভাবে

গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা : পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে যেভাবে

ছবি : বিবিসি

চলতি বছর বাংলাদেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।এই ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশে সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এবারই প্রথম গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। তবে এই পরীক্ষা কীভাবে হবে এবং একজন শিক্ষার্থী কীভাবে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই স্বচ্ছ ধারণার অভাব রয়েছে।যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় একজোট হয়েছে, তার একটি ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মীজানুর রহমান জানান, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক - এই তিনটি আলাদা বিভাগে তিন দিন সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।এমসিকিউ অর্থাৎ উত্তর বেছে নেয়ার পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর থাকবে ১০০।গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদন করতে হলে এসএসসি এবং এইচএসসি এই দুই পরীক্ষার প্রত্যেকটিতে সিজিপিএ স্কোর ৩-এর বেশি থাকতে হবে। যাদের একটি পরীক্ষায় এর চেয়ে কম স্কোর থাকবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতে অংশ নিতে পারবে না।

এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৬.৫ এবং মানবিক বিভাগের জন্য ৬ থাকতে হবে। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এই ন্যূনতম স্কোর থাকতে হবে।

বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু তারাই পরীক্ষা দিতে পারবে, যারা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করবে, তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নেবে না বলেও জানান অধ্যাপক মীজানুর রহমান।

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে কিভাবে?
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে প্রথমেই গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সচিব মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা এটাকে গুচ্ছ পদ্ধতি নয়, বরং জিএসটি বা জেনারেল অ্যান্ড সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পদ্ধতি বলছেন।

এই পদ্ধতিতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে প্রথমেই একটি সমন্বিত পরীক্ষায় (গুচ্ছ পদ্ধতিতে) অংশ নিতে হবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ০-১০০ এর মধ্যে একটি নম্বর দেয়া হবে।এই নম্বর পাওয়ার পর, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে নিজস্ব নিয়ম, বৈশিষ্ট্য এবং শর্ত উল্লেখ করে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেবে।এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা শর্ত থাকে বলে জানানো হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ২০১৯-২০ সালে যারা এইচএসসি পাস করেছে তাদেরকেই ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যারা পাস করেছে তাদের সুযোগ দেয়া হবে না।

শিক্ষার্থীকে দেখতে হবে, ভর্তি বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগ্য, তা দেখে তাকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে।তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্যই তাদের শর্তগুলো পূরণ হচ্ছে কি-না, সেটি খেয়াল রাখবে।তিনি বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষার নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসি'র স্কোর মিলে যারা এগিয়ে থাকবেন, ভর্তির ক্ষেত্রে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন।

তবে সব শর্ত মেনে একই বিভাগে বা বিষয়ে আসন সংখ্যার তুলনায় বেশি আবেদন জমা পড়লে কী করা হবে - এমন প্রশ্নে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এক্ষেত্রে একটি মেধা তালিকা তৈরি করা হবে।‘তবে এক্ষেত্রে আলাদা করে আর পরীক্ষা নেয়া হবে না,’ বলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধা তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে গুচ্ছ পদ্ধতির নম্বর, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর এবং বিভিন্ন বিষয়ে কি পরিমাণ নম্বর ওই শিক্ষার্থী পেয়েছে, সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হবে।এভাবে তৈরি করা মেধা তালিকায় যারা শুরুর দিকে থাকবেন, তারাই সংশ্লিষ্ট ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে পড়তে গেলে নির্দিষ্ট বিষয়ে সর্বনিম্ন কত নম্বর পেতে হবে, তা অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ করে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থীর মোট নম্বর বেশি থাকলেও যদি ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্ধারিত নম্বর না থাকে, তাহলে তিনি ওই বিষয়ে পড়তে পারবেন না।অবশ্য এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্ন মত দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির আরেকজন যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় পাওয়া স্কোর এবং বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেয়া ভর্তি বিজ্ঞাপন বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন।

‘একজন শিক্ষার্থী চাইলে এবং তার স্কোর ভালো থাকলে সে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। আর স্কোর কম থাকলে পারবে না,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।একজন শিক্ষার্থী একই সাথে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েও আবেদন করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিসি জানান, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি বিভাগে তাদের সব শর্ত পূরণ করে একই যোগ্যতা এবং স্কোর নিয়ে যদি আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেন, তাহলে তাদের সবাইকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে।‘দরকার পড়লে আমরা আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দিবো,’ বলছিলেন তিনি।

চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার কথা জানায়। পরে ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে :

• ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

• শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

• হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

• কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

• জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

• যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

• পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

• রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

• রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি

• শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়

• বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে রাজি হয়নি।বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৬টি।কৃষিবিষয়ক সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর স্নাতক শ্রেণীতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সূত্র : বিবিসি