সমুদ্রতলে ব্যাপক পরিবর্তন আমেরিকার কুমিরকে টেনে এনেছিল ক্যারিবিয়ানে

সমুদ্রতলে ব্যাপক পরিবর্তন আমেরিকার কুমিরকে টেনে এনেছিল ক্যারিবিয়ানে

মার্কিনজাত কুমির প্যাসিফিক সমুদ্রে আগেই উপস্থিত হয়েছিল, তখন পানামা তৈরী হয়নি। সেটা কীভাবে সম্ভব হল? -

বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের পৃথিবী। বিগ ব্যংগ বিষ্ফরণের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম পরিবর্তন হয়। এরপর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হেয়েছে।

পরিবর্তন বিভিন্নভাবে হতে পারে। কখনও হতে পারে কাজের মাধ্যমে কখনও হতে পারে এক জীবের সং অন্য জীবের জনন ক্রিয়ার ফলে। আবার পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রভাবও পড়তে পারে কোনও প্রাণীর আকার আচরনে। যেমনটা পড়েছে পানামার ক্যারিবিয়ান ও প্যাসিফিক কুমীরদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল বরফ যুগের সময় সমুদ্র তলের পরিবর্তন। এই গবেষণাটি চালিয়েছে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের পরীক্ষায় এই নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
 
২০০ মিলিয়ন বছর ধরে কুমীর এই গ্রহের বাসিন্দা। ক্রমে তারা বংশবিস্তার করেছে বিভিন্ন স্থানে। অন্যতম ক্যারিবিয়ান ও প্যাসিফিক সামুদ্রিক অঞ্চল। সেখানেই পরিবর্তনের ফলে প্রভাব ফেলে এই অঞ্চলের এই প্রাণীদের উপরে। কুমীর এমন একটি প্রজাতি যারা অনেক দূর পর্যন্ত জলের মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারে। তবে স্থলপথে এদের গতিবিধি মোটেই স্বচ্ছল নয়। ঘটনা হল এমন প্রাণী যা জলে স্বচ্ছল কিন্তু স্থলে নয় সেই প্রাণীর কীভাবে দেখা মিলতে পারে ক্যারিবিয়ান ও প্যাসিফিক সমুদ্র উপকূলে। সম্প্রতি আমেরিকজাত কুমীরের দেখা মিলেছে ক্যারিবিয়ান ও প্যাসিফিক সমুদ্র উপকূলে। প্রশ্ন ওঠে এমন কী করে সম্ভব? কারণ এই দুই সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে আমেরিকার জলপথের তেমন যোগ নেই। থাকলেও তাকে অনেকটা স্থল পথ অতিক্রম করতে হবে, যেটা কুমীরের পক্ষে সম্ভব নয়।

সেটা নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়েই এই তথ্য উঠে আসে। দেখা গিয়েছে ওই মার্কিনজাত কুমীর প্যাসিফিক সমুদ্রে আগেই উপস্থিত হয়েছিল , তখন পানামা তৈরী হয়নি। সেটা কীভাবে সম্ভব হল? দেখা গিয়েছে ৩০ লক্ষ বছর আগে তৈরি হয়েছিল পানামা ইস্থমাস। এই সময়ে বিশ্বের সামুদ্রিক তলে এক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনে এই অঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে যায় উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। এর ফলে তৈরি হয় ক্যারিবিয়ান সাগর। এর ফলেই দুই প্রান্তের প্রাণীদেরও স্থান পরিবর্তন হয়। এক স্থানের প্রাণী অন্য স্থানে চলে আসে। আর এভাবেই মার্কিনযাত কুমীর উঠে চলে আসে প্যাসিফিক ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। একে বলা হয় দ্য গ্রেট আমেরিকান ইন্টারচেঞ্জ।

কুমির, অ্যালিগেটর ও ঘড়িয়ালরা সাধারণ দৃষ্টিতে একই রমক দেখতে হলেও, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এরা পৃথক বর্গের অন্তর্গত। ঘড়িয়ালের মুখের ডগার কাছটি গোলাকার। তবে অ্যালিগেটর ও কুমিরকে পৃথক করা একটু কঠিন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে কুমিরের মাথাটি সরু ও দীর্ঘ আকারের হয়। অ্যালিগেটরের মুখটি অনেকটা ইংরেজি ইউ আকৃতিবিশিষ্ট এবং কুমিরের মুখটি ইংরেজি ভি আকৃতিবিশিষ্ট হয়। কুমিরের উপরের ও নিচের চোয়াল দুটির প্রস্থ এক এবং নিচের চোয়ালের দাঁতগুলি মুখ বন্ধ থাকা অবস্থায় উপরের চোয়ালের দাঁতগুলির উপরে থাকে। ফলে দাঁতগুলি ওই অবস্থায় দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট্য অ্যালিগেটরের নেই। একই বর্গের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় কুমির অনেক বেশি উগ্র হয়।

সব ধরনের কুমিরই আকৃতি ও জীববিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে একই রকম। কিন্তু তাদের আকার, প্রকৃতি, আচরণ ও বাসস্থানের ধরন প্রজাতি অনুসারে বিভিন্ন হয়। যদিও এই সব ব্যাপারে তাদের মধ্যে বেশ কিছু মিলও দেখা যায়। সব কুমিরই অর্ধ-জলচর প্রাণী। এরা মূলত নদী, হ্রদ ও জলাভূমির মিষ্টি জলেই বাস করে। কোনো প্রজাতির কুমির অর্ধ-লবনাক্ত ও লবনাক্ত জলেও বাস করে। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত মাছ, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীই এদের খাদ্য।

কুমির বিষুবীয় অঞ্চলে বাস করে। শীতল পরিবেশের প্রতি এরা সংবেদনশীল। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে এরা অন্যান্য ক্রোকোডিলিয়ান প্রজাতির থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। কোডাইলোমর্ফিয়ার অন্যান্য শাখার মতো এই শাখাটিও বিগত সাড়ে ২২ কোটি বছর ধরে নানা গণ-বিলুপ্তি সত্ত্বেও টিকে আছে। তবে এখন বাসস্থানের সমস্যা ও বেআইনি শিকারের ফলে কুমিরের অনেক প্রজাতিই বিপন্ন বা লুপ্তপ্রায়। -কোলকাতা২৪