কাঁচা দুধ থেকে তৈরি চিজে হতে পারে বার্ড ফ্লু ভাইরাস
-1761138173.jpg)
ফাইল ছবি।
কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরি চিজে বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১ ভাইরাসের জীবিত অস্তিত্ব থাকতে পারে।এমন আশঙ্কাজনক তথ্যই উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণায়।
এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন, চিজের অম্লত্ব যত বেশি, ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
মঙ্গলবার সায়েন্স ডেইলি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের করনেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত সংক্রামক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচপিএআই) ভাইরাস কাঁচা দুধ থেকে তৈরি কিছু চিজে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। এমনকি কাঁচা দুধের চিজের জন্য নির্ধারিত ৬০ দিনের পরিপক্বতা সময় পার হওয়ার পরও তা টিকে থাকতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক দিয়েগো ডিয়েল বলেন, “সংক্রমিত গরুর দুধে ভাইরাসের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি আগের গবেষণায় প্রমাণিত হওয়ায় আমরা এই পরীক্ষা শুরু করি।”
এফডিএর নির্দেশিকা অনুযায়ী, কাঁচা দুধের চিজ অন্তত ৬০ দিন ধরে ৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়। তবে গবেষকরা জানান, ৩৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায়ও কিছু চিজের নমুনায় ভাইরাস ১২০ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, চিজের অম্লত্ব বা পিএইচ মাত্রা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব চিজের পিএইচ ৫ বা তার নিচে — যেমন ফেটা চিজ — তাতে কোনো সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাইরাস পাওয়া যায়নি। বিপরীতে, পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৬-এর মধ্যে থাকা চিজগুলোতে ভাইরাস টিকে থাকে।
গবেষণার সহলেখক ও দুগ্ধ খাদ্য অণুজীববিজ্ঞানী নিকোল মার্টিন বলেন, “এইচ৫এন১ নিয়ে আমাদের গবেষণা দুগ্ধশিল্পের জন্য সময়োপযোগী ও তথ্যনির্ভর দিকনির্দেশনা পাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গবেষণার সময় গবেষক দলটি কৃত্রিমভাবে এইচ৫এন১-সংক্রমিত কাঁচা দুধ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক চিজ তৈরি করে ভাইরাসের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করে। এছাড়া, এফডিএ কর্তৃপক্ষের পাঠানো বাণিজ্যিক চেডার চিজের চারটি নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। আর সেগুলোর সবকটিতেই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
এছাড়া সংক্রমণ ঝুঁকি যাচাইয়ে ফ্যারেট প্রাণীর ওপরও পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, সংক্রমিত কাঁচা দুধ পান করা ফ্যারেটগুলো আক্রান্ত হয়, তবে চিজ খাওয়ানো ফ্যারেটগুলোতে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
ডিয়েল বলেন, “দুধ তরল হওয়ায় তা শরীরের শ্লেষ্মা ঝিল্লির সঙ্গে বেশি সংস্পর্শে আসে, যা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়াতে পারে; চিজের ক্ষেত্রে এ প্রভাব তুলনামূলক কম।”
গবেষকরা আরও জানান, চিজে অম্লত্ব বাড়াতে সাধারণত ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া বা সরাসরি অ্যাসিড ব্যবহারের মাধ্যমে দুধের চিনি থেকে অ্যাসিড তৈরি করা হয়, যা ভাইরাস ধ্বংসে সহায়ক ভূমিকা রাখে।