সুস্থ থাকতে চাই পরিমিত ঘুম

সুস্থ থাকতে চাই পরিমিত ঘুম

ফাইল ছবি।

হুট করেই তো অভ্যাস গড়ে ওঠে না, আবার হুট করেই অভ্যাস ছাড়া যায় না। ভালো অভ্যাস যেমন আমাদের ব্যক্তিত্ব কতটা শক্তিশালী প্রমাণ করে, তেমনই খারাপ অভ্যাস আমাদের মধ্যে কতটা দুর্বলতা আছে তা প্রকাশ করে। মানুষকে বলা হয় ‘অভ্যাসের দাস’। প্রতিদিনের লাইফস্টাইলেই আপনি আপনার জীবনকে পরিচালিত করছেন। খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সর্বক্ষেত্রেই আপনি নিজস্ব একটা মৌলিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। আর সেই অভ্যেসটা যদি ঘুমের ক্ষেত্রে না করা যায় তবেই যত বিপত্তি। প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে উঠবেন, ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময় ঘুমের দৈনন্দিন ছন্দের উপর বেশ প্রভাব ফেলে।
 
মানুষ বুড়ো হয় যখন, অনেকের বেশ সময় থাকে, কোনও কাজ নেই, তাই দিনরাতের সূচি যায় ওলট-পালট হয়ে। কোনও দিন গভীর রাতে ঘুমানো আবার খুব ভোরে জেগে ওঠা। জীবন ছন্দ্রে এমন অনিয়ম হলে ঘুমের উপর এর প্রভাব পড়ে। তাই ওলট-পালট এমন ঘুমের ঝুঁকি আছে অনেক।
  মনে হবে জীবন বিলাশ, কিন্তু তাই বলে এমন বেহিসাবি ঘুম গোলমেলে করে দেয় দৈন্দিন দেহছন্দ। নিদ্রা ও জাগরণের সূচি যায় পালটে। তখন নির্ঘুম কাটে রাত।
 
ঘুমের ব্যাঘাত এমন ঘটতে থাকলে দীর্ঘ দিন, ঘুমের ঘাটতি শরীরের কষ্ট বয়ে আনে মনে কষ্ট। মেজাজ বদলে যায়। চিন্তা-ভাবনার কৌশল সূক্ষ্ম থাকে না, বিচার বুদ্ধিও আর আগের মতো থাকে না। ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরেও হয় অনেক সমস্যা যেমন- হূদরোগ, স্থূলতা ও ডায়াবেটিস ইত্যাদি। সাহায্য চাই তখন।
 
ঘুমের এমন সমস্যা নিয়ে কষ্ট করা কেন। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। নিদ্রা বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হতে পারেন। শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা চাই, যাতে অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা যেন লুকিয়ে না থাকে। স্লিপ ডায়েরি রেখে দেখা যেতে পারে ঘুমের নমুনা ও ধরন। ফিরে যান নিয়মের জীবনে। তাই জীবন ছন্দকে ঠিক পথে আনতে গেলে প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। জীবনে সঠিক সূচিতে ফিরে আসার জন্য জাগরণের এই ক্ষণকাল বড়ো গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রথম দিকে ওঠার জন্য এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এলার্ম ঘড়ি শব্দ করার ৭-৮ ঘণ্টা আগে রাতে শোবেন। তবে ঘুমের সময় না হলে বা চোখে ঘুম ঘুম না এলে শোবেন না। ঘুমিয়ে পড়ার জন্য খুব চেষ্টা করলে সারারাত জাগরণে যাবে। শোবার সময় আসার আগে থেকে কিছু প্রস্তুতি চাই। ঘুমাতে যাবার দেড় ঘন্টা আগে থেকে ঘরের সব ইলেক্টনিক সামগ্রী, টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল অফ করতে হবে। শোবার ঘরের আলো মৃদু করতে হবে। শিথিল হওয়া প্রয়োজন। শোয়া অবস্থায় ভারি কাজ করা উচিত নয়।
 
দিনের কর্মসূচিতে নিয়ে আসতে হবে নিয়ম। আহার, ব্যায়াম, ঘরের কাজ কর্ম, সামাজিকতা সব কিছু চাই নিয়ম সূচি অনুযায়ী মেনে চলা। দিনের সূচিতে নিয়ম আনলে নিদ্রা সূচিতেও আসবে নিয়ম। আবার দিন নির্ঘণ্ট মেনে চললে মেজাজও থাকে ভালো, কর্মেও সুফল আসে। খুব বাড়াবাড়ি নয় মোটামুটি নিয়ম মেনে চল্লেই হলো। বৃদ্ধ হলে ঘুমের সমস্যা। বয়স হলে এমন ঘুমের বেনিয়ম কেবল একমাত্র সমস্যা নয়।
  যাদের বয়স বেশি তারা শ্লথ তরঙ্গ ঘুম বা গভীর ঘুম হারিয়ে ফেলেন। সেজন্য ঘুম থেকে উঠলে অস্থির লাগে। বয়স্কদের আরও সমস্যা থাকে, রাতে বারবার ঘুম থেকে উঠতে হয়। 

তবে প্রাপ্তবয়স্ত তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। অন্যথায় ঘটতে পারে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা। আর ঘুম যদি কোনোভাবেই না আসে এবং সেটি যদি অনেকদিন ধরে হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।