বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একটি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের শ্রমিক-পুলিশ ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়ছে, যাতে আসামী করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে।

শনিবার শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে শ্রমিক-পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়। আহত হয় বারো জন। নিহতদের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল বলে বিবিসিকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল কবির জানান, মামলা দুটির মধ্যে একটি পুলিশ বাদী হয়ে এবং অপরটি এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে। আর আসামী করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনকে।

মি. কবির জানান, পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছে সেখানে অজ্ঞাতনামা প্রায় দুই-আড়াই হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে শ্রমিক ছাড়াও বহিরাগতরাও রয়েছে।

এই মামলায়, পুলিশের কর্তব্যে বাধা দেয়া এবং পুলিশকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সাথে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাটিও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।আরেকটি মামলা দায়ের করেছে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। এছাড়া লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুরেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই মামলায় আসামী হিসেবে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১০৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে শ্রমিক এবং বহিরাগত-সবাই আছে।মি. কবির বলেন, সহিংসতার ঘটনাটি পাওয়ারপ্ল্যান্ট এলাকার মধ্যে ঘটলেও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে এলাকাবাসী ভেতরে ঢুকে পড়ে।

এই সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে মি. কবির বলেন, ১৭ই এপ্রিলের ঘটনার পেছনে যা কাজ করেছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া।তিনি বলেন, "শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ছিল বিভিন্ন, শ্রমিকদের মধ্যেই পক্ষ-বিপক্ষ ছিল, বাইরের উস্কানিদাতা ও ইন্ধনদাতা ছিল। বাকিটা তদন্তের পর বলা যাবে।"

কী ঘটেছিল?

শনিবার পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, ''কিছু উত্তেজিত শ্রমিক সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করে এবং যানবাহনে ভাংচুর চালায়, অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের চারপাশ থেকে ঘেরাও করে ফেলে।'' তিনি বলছেন।

সেখানে পুলিশের গুলি করার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ''পুলিশ সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। চারপাশ থেকে ইটপাটকেল মারা হচ্ছিল। তাদের সামনে পিছনে যাওয়ার মতো কোন অবস্থা ছিল না।''

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যেই এলাকায় সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলছেন, "বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে শ্রমিক সরবরাহ করে বাইরের কোম্পানি। তাদের সাথে শ্রমিকদের টাকা পয়সা নিয়ে অনেকদিন ধরেই সমস্যা চলছিলো। ঘটনাটি কম্পাউণ্ডের ভেতরে। আমাদের সেখানে প্রবেশও করতে দেয়া হয়না"।তবে এলাকাবাসী বলছে কয়েকদিন ধরেই বেতন ভাতাসহ বেশ কিছু দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিলো।

শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পরিষদের জন্যও দাবি জানিয়ে আসছিলো।এর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলেও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের বিরোধিতার জের ধরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে চার জন নিহত হয়েছিল।

সেসময় বেশ কয়েকটি মামলায় কয়েক হাজার মানুষকে আসামী করা হয়েছিল। যার জের ধরে এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর গ্রাম ছেড়েছিলেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।তখন গ্রামবাসীর অভিযোগ ছিল যে, ঐ প্রকল্প চালু হলে গ্রামটিতে লবণ চাষ ও চিংড়ি চাষ হবে, এবং তার ফলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যা নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছিল তারা।

সূত্র : বিবিসি