পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের জায়গা বিক্রি, অনিয়মের তদন্তে প্রশাসন

পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের জায়গা বিক্রি, অনিয়মের তদন্তে প্রশাসন

সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলে গিয়ে মূলফটকের পাশে নতুন সিঁড়ির নির্মাণ করা হচ্ছে- ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনা জেলা প্রশাসন অবশেষে পাবনার এক আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক স্কুলের জায়গা বিক্রির পাঁয়তারা বন্ধ করেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের নির্দেশে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মোসলেম উদ্দিন পাবনার ঐহিত্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলে উপস্থিত হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। স্কুলটির প্রধান ফটকে এমন ভাবে বাণিজিক সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে যে দেখে কারো  চেনার উপায় নেই যে এটা একটি স্কুল।

এ সময় সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের দোকান হিসেবে সম্পদ বিক্রি ও দোকান ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় আর্থিক কাগজ-পত্রাদি দ্রুততম সময়ে পাবনা জেলা প্রশাসকের নিকট জমাদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া এ সব অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, ‘ঐতিহ্যবাহী সেন্ট্র্রাল গার্লস স্কুলের পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের সিঁড়ি ভেঙে জায়গা বিক্রির প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে।’
স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু ইসহাক শামীম সম্প্রতি পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের প্রশস্ত সিঁড়ি ভেঙে জায়গা বিক্রির চুক্তি করেন একটি হোটেলের সঙ্গে।

পাবনার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন জানান, ‘ঐতিহ্যবাহী প্রায় শতবর্ষী পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের সভাপতি আবু ইসহাক শামীম স্বেচ্ছারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্কুলের সম্পদ বিক্রি করছেন, গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে পাবনার জেলা প্রশাসক আমাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।

সরেজমিনে, সোমবার দুপুরে সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলে গিয়ে মূলফটকের পাশে নতুন সিঁড়ির নির্মাণ কাজ করতে দেখা যায়। এ সময়ে আমরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে এ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

স্কুল সভাপতি ঢাকায় থাকায় তাকে দ্রুততম সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানাতে যথাযথ কাগজ-পত্রাদিসহ জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহমান জানান, ‘দুপুরে শিক্ষা অফিসার উপস্থিত হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলে আমরা শ্রমিকদের বিদায় করে দিয়েছি। সভাপতি ফিরলে জেলা প্রশাসক এর নির্দেশানুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, পাবনা মধ্য শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্র্রাল গার্লস হাই স্কুলের বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু ইছাহাক শামীমের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছারিতায় স্কুল ভবনের দোকান বিক্রি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।

সম্প্রতি করোনায় বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকার সুযোগে মূল ফটকের পাশে প্রশস্ত প্রধান সিঁড়িসহ সুবিশাল জায়গা বিক্রির জন্য ‘খাবার বাড়ি’ নামের রেষ্টুরেন্টের সাথে চুক্তি করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় প্রশাসন।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠে।
অনৈতিক উদ্দেশ্যে সভাপতির এ ধরণের একের পর এক স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বিব্রত হলেও তার ভয়ে কেউ তাকে কিছু বলতে পারেনা।

সব সময় সবার প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলেও তাকে কেউ বাধা দিতে পারেন না বলেও অভিযোগ তাদের।

ইতিপূর্বে তিনি একক সিদ্ধান্তে, অর্থের লোভে পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের ১০০টি দোকান ও কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ ও বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে কমে গেছে স্কুলের জমি ও খেলার মাঠ।

ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে স্কুলের সম্পদ বিক্রি করায় ফুঁসে উঠছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবু ইছাহাক শামীমের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘স্কুলের জায়গা নতুন করে বিক্র করা হচ্ছে না। আধুনিকায়ন করতে সবার সম্মতিতেই ডেভলপারকে দেয়া হয়েছিল। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই পুরাতন সিড়িটি ভাঙ্গা হচ্ছে। এখানে কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই।’ তবে অনেকদিন পর হলেও জেলা প্রশাসন এ্যাপারে তদন্তে নেমেছে।