পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয়ে বাংলাদেশের স্বস্তি, অস্বস্তি ও শঙ্কা

পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয়ে বাংলাদেশের স্বস্তি, অস্বস্তি ও শঙ্কা

পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয়ে বাংলাদেশের স্বস্তি, অস্বস্তি ও শঙ্কা

বিজেপিকে পেছনে ফেলে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা ব্যানার্জির এ জয় প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্য কী অর্থ বহণ করে?ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির কারণ, আবার অস্বস্তিরও।

অস্বস্তি
গৌতম লাহিড়ী বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করেন। তার জয়ের ফলে বাংলাদেশে একটা আশঙ্কা হয়তো তৈরি পারে যে, তিনি কি সেই চুক্তির এখনো বিরোধিতা করে যাবেন?

তিনি বলেন, ‘কিন্তু মমতা ব্যানার্জির যেটা যুক্তি, তিস্তার যেখান উৎস, সিকিমে অনেকগুলো বাধ নির্মাণ হওয়ার ফলে তিস্তায় পানি প্রবাহ অনেক কমে গেছে। ফলে পানির সঞ্চার আরো বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নদী উপত্যকা পরিচালনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে একটি প্রাথমিক আলোচনা চলছে। পানির সঞ্চার বেশি হলে মমতা ব্যানার্জি হয়তো আর আপত্তি করবেন না।’

তবে বাংলাদেশে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও তিস্তা ইস্যুতে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন হতো বলে তার মনে হয় না। অনেকে ভাবতে পারেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের সাথে বাংলাদেশের এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তি হয়তো হয়ে যেত বলে তাদের ধারণা। কিন্তু তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সমস্যা কিন্তু পানির সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, তিস্তার পানি অভ্যন্তরীণ ভোটের রাজনীতির একটি বিষয়ে পরিণত করা।

তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে মার্জিনাল ভোট নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলেও, তারা কি প্রথমেই একটি অস্ত্র তুলে দিতো মমতার হাতে যে, দেখ-আমি ছিলাম, আমি তোমাদের তিস্তার পানি রক্ষা করেছি, বিজেপি এসেই এটা দিয়ে দিয়েছে? কাজেই আমার মনে হয় না, ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেই যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হতো, আমি সেটা মনে করি না।

তিনি মনে করছেন, কেন্দ্রের সরকার আর পশ্চিমবঙ্গে আগের মতোই একই শাসক থাকায় বর্তমান পরিস্থিতির খুব একটা অদল-বদল ঘটবে না।বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি না, ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তাতে এই নির্বাচনের ফলাফল বড় কোনো ভূমিকা রাখবে। পরিবর্তন তো কিছু হয়নি। মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিলেন, তিনিই আসছেন, বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল, তারাই থাকছে। সত্যিকার অর্থে স্ট্যাটাস তো একই থাকছে।

স্বস্তি
দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলছেন, মমতা ব্যানার্জির বিজয় বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিরও কারণ।

তিনি বলেন, বিজেপি সরকার বলেছিল, তারা পশ্চিমবঙ্গে জয়ী হয়ে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে তারা সিএএ বা সিটিজেনশীপ অ্যামেন্ডমেন্ড অ্যাক্ট পাস করবেন। মমতা ব্যানার্জি এই আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। ফলে একটা বিষয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত থাকবে যে, সিএএ বা এনআরসি- আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও অন্তত এই দুইটি বিষয় বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বা অন্য সম্পর্কের ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন বলেই তিনি মনে করছেন।

তবে এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি তৌহিদ হোসেনেরও।

তৌহিদ হোসেন বলেন, বিজেপিতো আসাম, ত্রিপুরায় এর মধ্যেই ক্ষমতা তো পেয়েছে। এখন পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতায় এলে এখানে কম্যুনাল (সাম্প্রদায়িক) কিছু আশঙ্কা বাংলাদেশের তৈরি হতে পারতো, সেটা হয়নি, এটা বাংলাদেশের জন্য বেশ একটি স্বস্তির বিষয়।

শঙ্কা
ভারতের সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী একটি শঙ্কার কথাও বলছেন। কিছু দিন আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়কার কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

সেই সময় নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তা নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি।

একই প্রসঙ্গ টেনে দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলছেন, ‘তাকে যেভাবে বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করেছে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের জন্য, রাজনৈতিক কর্মসূচি করার জন্য, ফলে মমতা ব্যানার্জি ক্ষুব্ধ হয়ে একটা মন্তব্য করেছিলেন, যত দিন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকবে, আমি তার সাথে ঢাকায় যাবো না।’

গৌতম লাহিড়ী বলেন, ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যে যৌথ প্রকল্পগুলোর কথা চলছে, সেখানে তো মমতা ব্যানার্জি সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখন সত্যিই যদি তিনি সেই ধরনের অসহযোগিতা করেন, তাহলে রাজনৈতিক কারণে একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।

তিনি মনে করেন, এবারের যে বিপুল জয়, তাতে মমতা ব্যানার্জিও মনে করেন, তার ওপর অনেক দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। ফলে তাকে এমনকি জাতীয় স্তরের নেত্রী হতে গেলে সেই ধরনের একটা উদার মনোভাব দেখাতে হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি