দ্বিতীয় ডোজ টিকার অনিশ্চয়তায় ১৪ লাখ মানুষ

দ্বিতীয় ডোজ টিকার অনিশ্চয়তায় ১৪ লাখ মানুষ

দ্বিতীয় ডোজ টিকার অনিশ্চয়তায় ১৪ লাখ মানুষ

মোহাম্মদপুরের ওয়ালিউল বিশ্বাস করোনার টিকা নিয়েছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। ২৭ মার্চ তার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তিনি দ্বিতীয় ডোজ পাননি। তাকে বলা হয়েছে এক মাস নয়, দুই মাস পরেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া যাবে। তারপর বলা হয়েছে তিন মাস। আগামী ২৫ মে সেই সময়ও শেষ হবে। কিন্তু টিকা পাবেন কীনা জানেন না তিনি। ওয়ালিউল বলেন, ‘আমি যদি তিন মাসেও দ্বিতীয় ডোজের টিকা না পাই তাহলে কী হবে? আমার প্রথম ডোজে কোনো কাজ হবে কীনা বা আবার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে কীনা কিছুই বুঝতে পারছিনা। কোনো পরামর্শ দিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’ তার মতো এমন অনিশ্চয়তায় এখন প্রথম ডোজ টিকা নেয়া ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। তাদের অনেকেরই টিকা নেয়ার নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনার অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা দেয়া শুরু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে এখন এই টিকা অবশিষ্ট আছে মাত্র নয় লাখ। দ্বিতীয় ডোজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আনার চেষ্টা করছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র টিকা দিতে রাজি হয়েছে৷ তবে সেই টিকা কবে আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

টিকা নিয়ে পাহাড়ে
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় টিকা দিতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানতে হয় পাহাড় চড়ার নানা কৌশলও, জানান ডা. জেইনেপ এরাল্প। তিনি বলেন, ‘মানুষ এসব অঞ্চলে অনেক কাছাকাছি বাস করে, ফলে সংক্রমণ সেখানে তাড়াতাড়ি ছড়ায়। আর মানুষ হাসপাতালে যেতে কিছুটা অনিচ্ছুক বলেই আমরা তাদের কাছে যাই।’

বাংলাদেশের হাতে এখন চীনের পাঁচ লাখ উপহারের টিকা রয়েছে। তারা আরো ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণে চীনের টিকা পেতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই টিকা আসলেও তা অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নাই। তার জন্য অক্সফোর্ডের টিকাই লাগবে।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে। চুক্তি অনুাযয়ী প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ। এরপর সিরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি। কথা ছিলো, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা। বাংলাদেশে এই চুক্তির বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে শুরুতেই ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে। এছাড়া নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় উপহার হিসেবে পেয়েছে আরো ১২ লাখ। ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ। সবমিলে বাংলাদেশ হাতে টিকা পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেয়া সম্ভব ছিলো।

বিএসএমইউ'র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম জানান, সর্বোচ্চ চার মাসের (১৬ সপ্তাহ) মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে হবে। এরপর নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না। এরপর আবার নতুন করে দুই ডোজই নিতে হবে। তবে দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারলে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।

তিনি আশা করেন, ‘এখনো সময় আছে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ডের টিকা এরমধ্যে পাওয়া যাবে। আর অক্সফোর্ড আর ফাইজারের টিকার মিক্সিং করার গবেষণা প্রায় সফল। এভাবে আরো হলে সংকট কেটে যাবে।’

এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্রসহ দায়িত্বশীল কয়েকজনকে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার টিকা নিয়ে শুরু থেকেই পরিকল্পনার অভাব আছে। এখনো মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে পরিস্কার তথ্য দেয়া হচ্ছে না। আর এখন মিক্সড ডোজের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

সূত্র : ডয়েচে ভেলে