সখির সুচের স্বপ্নের ফোঁড় এখন সারাদেশে

সখির সুচের স্বপ্নের ফোঁড় এখন সারাদেশে

উদ্যোক্তা নাদিয়া সুলতানা সখির অধীনে মহিলা শ্রমিকরা নকশিকাঁথা বুননে ব্যস্ত (ইনসেটে) সখি

এম মাহফুজ আলম( পাবনা ): সখির সুচের স্বপ্নের ফোঁড় এখন এলাকা ছেড়ে সারাদেশে। পাবনার গয়েশপুরের নারী উদ্যোক্তা পর্দানশীল নাদিয়া সুলতানা সখি। পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি প্রথম বর্ষ (অনার্স) এর ছাত্রী সখি। করোনাকালীন ঘরে লেখাপড়ার পাশাপাশি চার সদস্যের পরিবারের প্রথম সন্তান সখি কিছু আয়ের প্রয়োজনবোধ থেকেই তার স্বপ্ন দেখা শুরু। আজ সেই স্বপ্ন তার বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ধারাবাহিক  বৈশ্বিক করোনাকালীন ঘরে আবদ্ধ জীবনের বুুনন স্বপ্ন নকশিকাঁথা এখন অনলাইনের মাধ্যমে সখির নিজ এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। গাঁও গ্রামের সখির তৈরিকৃত নিখুঁত কারুকার্য নকশিকাঁথা ক্রেতাদের চাহিদার তালিকা এখন দৈনন্দিন ভিড়ের খাতায়। তার অধিনে ২০ জন নারী কাজ করছেন নরম পরশে নিঁখুত বুুননে নকশিকাঁথা। স্বাবলম্বীর কাতারে এই ২০ নারীও।

দেশের শিল্প রক্ষায় অনলাইনে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে তৃণমূল নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেয় ‘ওমেন এন্ড ই কমার্স ফোরাম’ (উই)। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নকশিকাঁথা তৈরির উদ্যোগ নেন সখি।

করোনাকালীন সময়ে বাড়িতে বসে না থেকে কিছু করার ইচ্ছা থেকেই তার স্বপ্ন বুননের কাজ শুরু হয়। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে নকশিকাঁথা পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাপকের  হাতে। এখন তার নকশিকাঁথা ব্যক্তি পর্যায় শুধু নয়; প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ছড়িয়ে গেছে তার এই শিল্প।

উদ্যোক্তা নাদিয়া সুলতানা সখির তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন স্থানীয় ২০ জন নারী। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬০ টি কাঁথা বিক্রি করেছেন তিনি। যার বিক্রি মূল্য ছিল ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৬০ টাকা। এর মধ্যে "উই" এর মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৯৮ হাজার ৭২০ টাকার নকশিকাঁথা। 

সখি বলেন,‘তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের কাজের যে গুনগত মান, সেটা যদি আবার নতুন করে তুলে ধরতে পারি, তাহলে আমরা দেশে এবং দেশের বাইরে নকশিকাঁথাকে আবার জনপ্রিয় করতে পারব।’

এখানে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা বলেন,‘সপ্তাহে একদিনও আর বসে থাকতে হয়না আমাদের। পেটের দায়ে রাস্তায় রাস্তায় আর ঘুরতেও হচ্ছে না। কাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছি।’

কর্মরত শ্রমিক আছিয়া খাতুন, বুলু খাতুন, খাদিজা বেগম ও সোনালী খাতুন বলেন, তারা দীর্ঘ করোনাকালীন সময়ে স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলেন। সংসার চালাতে হিমশীম খাচ্ছিলেন। এমনি সময়ে নাদিয়া সুলতানা সখির অধিনে নকশিকাঁথার কাজ করে অনেকটা স্বাবলম্বীর পথে। তারা সখির অধিনে এসে ২০টি পরিবার সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। এ দেখে আশপাশের বহু মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছেন নকশিকাঁথা বুননে।

উদ্যোক্তার বাবা  মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন জনি জানান, ছোটবেলা থেকেই যেকোন কিছুতে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে থাকে সখি। তার অসাধারণ ধৈর্যের সফলতা পাচ্ছেন সখি। সখির নকশিকাঁথা পাওয়ার পর ক্রেতারা তার কাজের প্রশংসা করতে ভুলেন না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস, মেসেঞ্জারে ধন্যবাদ বা সরাসরি প্রশংসা করে যাচ্ছেন তারা।

রিতা শিকদার নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘নিখুঁত, টেকসই, আরামদায়ক এবং চোখ ধাঁধানো নকশায় তৈরি করে এ কাঁথাগুলো। এজন্যই বারবার সখির কাছ থেকে কাঁথা নিতে আসি।’

উদ্যোক্তা সখি বিশ্বাস করেন, সামান্য একটু সহায়তা পেলেই বাংলাদেশের পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে দেশের উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে।