পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ার হাটে চাঁই (দুয়ারি) কেনা-বেচার ধুম

পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ার হাটে চাঁই (দুয়ারি) কেনা-বেচার ধুম

পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ার হাটে চাঁই (দুয়ারি) কেনা-বেচার ধুম -

মৎস্য অঞ্চল হিসেবে খ্যাত পাবনার বেড়া ঘেঁষা পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগরে বর্ষার প্রারম্ভে গত কয়েকদিন যাবৎ নদীতে আকষ্মিক পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। বেড়া অঞ্চলে রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল বিধৌত ছাট বড় ৮টি নদী। মাছের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলে বর্ষার আগমণে মাছ শিকারিরা মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তাই মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ধুম পড়ে যায় এ অঞ্চলে। বিশেষ করে বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এসব চাঁই (দুয়ারি) তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
 
ঐতিহ্যগতভাবে আষাঢ় মাস শুরুর দিকে উপজেলার বেড়া উপজেলার পুরান বাজার ও চতুর হাটে চাঁই (দুয়ারি) চাড়ো, পলো, বৃত্তি, বুছনা ইত্যাদি বিক্রির ধুম পড়ে যায়।
 
মাছ ধরার উপকরণ বিক্রির প্রধান হাট উপজেলার বেড়া বাজার সংলগ্ন পাটপট্টি। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এসব উপকরণ বিশেষ করে চাঁই(দুয়ারি) বিক্রি হয়ে থাকে। বিগত ৫/৬ যুগ ধরে মাছ ধরার চাঁই(দুয়ারি) কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত এই পাটপট্টি হাট। দেশের দূর-দূরান্ত  থেকে মৎস্য শিকারিরা ভিড় করেণ এ হাট্টিতে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে অবিরামভাবে বেচাকেনা। 

চাঁই তৈরিকরকরা জানান,‘এক একটা চাঁই তৈরিতে ২ শ’ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে জিনিসের মান বুঝে সেগুলো সাড়ে তিনশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ টাকায় বিক্রি হয়। বড় আকারের চাঁই তৈরিতে খরচ হয় পনেরশ’ থেকে দুই হাজার টাকা। বিক্রি হয় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।’

পাটপট্টি চাঁইয়ের হাটে গিয়ে জানা যায়, বেড়ায় মূলত নাগডেমড়া, ফরিদপুর, আটিয়াপাড়া, ক্ষিদিরপুর থেকে চাঁই ( দুয়ারি) বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। চাঁই তৈরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিপূল সংখ্যক পরিবারের জীবন জীবিকা। চাঁই তৈরির কারিগররা বিভিন্ন এনজিও বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ কিনে চাঁই তৈরি করেন বলে তৈরিকারকরা জানান। 

চাঁইয়ের হাটে বিক্রি করতে আসা বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলের চরসারাশি গ্রামের আক্তার আলী জানান, ‘প্রতিটি চাঁই বানাতি (তৈরিতে) যা খরচ হয়; তা থেকে বিক্রিতে ভালই লাভ হয়। একজন কারিগর সারা দিনে ছোট আকারের দুইহান দোয়ারি বানাবের পারে। গেল বছরের থেইক্কা এবছর আগেই বেচা কেনা হচ্ছে দামও একটু বেশি পাচ্ছি।’

চাঁইয়ের হাটে ক্রয় করতে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর বান্তিয়ার চরের মোতালেব মিয়া জানান, চাঁই পাতলে চিংড়ি, বোয়াল, বাইনসহ নানান ধরণের দেশি মাছ ধরা পড়ে। তাছাড়া বাজারে চাঁইয়ে ধরা মাছের চাহিদাও  থাকে বেশি। কারণ চাঁইয়ে পড়া মাছগুলো তাজা থাকে। আষাঢ় মাস শুরু থেকে মাছ ধরা ও বিক্রি চলে পুরো তিন মাসের অধিক। 

বিক্রেতারা জানান,‘সরকারি সহযোগিতা পেলে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণবেশি বেশি তৈরি করতে উৎসাহ পাবেন। সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িত বাঁশ শিল্পও টিকে থাকবে, স্বাবলম্বী হবে কারিগর পরিবারগুলো।