এম্বুল্যান্স সিন্ডিকেটের হাতে মার খেলেন কুবি শিক্ষার্থী

এম্বুল্যান্স সিন্ডিকেটের হাতে মার খেলেন কুবি শিক্ষার্থী

চালক এমদাদ হোসাইন

অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এম্বুল্যান্স চালকের হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) দুই শিক্ষার্থী। বুধবার (৯ জুন) রাত পৌনে ১ টায় কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহেল রানার বাবা ব্রেন-স্ট্রোক করলে তাঁকে চিকিৎসা করাতে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নেন সোহেল ও তার এক বন্ধু। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে টাওয়ার হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রোগীকে ঢাকা নিতে পরিচিত এম্বুল্যান্স চালককে খবর দিয়ে আনলে রোগীকে সে গাড়িতে তুলতে বাধা দেন স্থানীয় এম্বুল্যান্স চালকরা। এসময় সোহেল রানা এবং তার বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী শওকত রেজার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন চালকরা। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গেলে শওকত রেজার গায়ে হাত তুলে লাঞ্চিত করেন হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ এম্বুল্যান্সগুলোর একজন চালক।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শওকত রেজা বলেন, আমরা হাসপাতালের এম্বুল্যান্স ব্যবহার না করায় ওই এম্বুল্যান্স চালকরা একযোগে আমাদের সাথে ঝগড়া করতে আসে। একপর্যায়ে একজন ড্রাইভার আমার গায়ে আঘাত করে। এসময় আমার হাতে থাকা ভিডিও ধারণের ডিভাইসটি পড়ে যাওয়ায় আর ভিডিও করতে পারিনি।তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় মুমূর্ষু  রোগীর শারীরিক  অবস্থা আরও নাজুক হয়ে যায়। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিব।ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের ছবি হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে আক্রমণকারী ব্যক্তির নাম এমদাদ হোসাইন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে এমদাদ হোসাইনকে পাওয়া না যাওয়ায় তার এক সহযোগী থেকে মুঠোফোন নাম্বার নিয়ে তাকে কল করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি প্রতিবেদকের কল কেটে ফোন বন্ধ করে দেন। এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এম্বুল্যান্সগুলোর আরেকজন চালক বলেন, দোষ দু'পক্ষেরই। হাসপাতালের এম্বুল্যান্স না নেওয়ায় আমরা ক্ষেপেছি। কারণ আমাদের রুটি রুজি রোগী পারাপার করেই। তবে এমদাদ ছাত্রদেরকে মেরে ভুল করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় এমন বেপরোয়া আচরণ করেন এসব এম্বুল্যান্স চালকরা। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন টিপু মিয়া নামের একব্যক্তি। যিনি এম্বুল্যান্সগুলো থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন। তথ্য সংগ্রহকালে ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত না থাকায় একজন চালক থেকে তার মুঠোফোন নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে ফোন দেওয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বলেন, আমি এখন এ দায়িত্বে নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।

তবে টিপু মিয়াকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার আগে আরেকটি নাম্বার থেকে ফোন করে তিনি আজ হাসপাতালে আসেননি কেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমি একটা কাজে ব্যস্ত আছি। সন্ধ্যার দিকে আসবো।

এম্বুল্যান্স চালকদের এ সিন্ডিকেটের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলে হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) ফখরুল ইসলামের সাথে কথা বলেন প্রতিবেদক।

ফখরুল ইসলাম বলেন, এম্বুল্যান্সগুলো আমাদের নয়। আমরাও এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এম্বুল্যান্সগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে আমরা এদের সাথে অনেকবার বসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। এ ব্যাপারে থানায়ও কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বখতিয়ার চৌধুরী বলেন, আমি এ থানায় সম্প্রতি এসেছি। তাই এর আগে অভিযোগ পেয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা। তবে এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিবো।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি যেহেতু শহরে হয়েছে এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা কোতোয়ালি থানাকে অনুরোধ করবো।