পরিশ্রমী, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার অঙ্গীকার রইসির

পরিশ্রমী, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার অঙ্গীকার রইসির

পরিশ্রমী, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার অঙ্গীকার রইসির

ইরানের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ইবরাহিম রইসি পরিশ্রমী, বিপ্লবী ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর শনিবার প্রথম প্রকাশিত বিবৃতিতে এ কথা জানান তিনি।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'প্রিয় ইরানের জনগণ, আমি যেরকম নির্বাচনে স্বাধীনভাবে প্রবেশ করেছি, ইনশাআল্লাহ আপনাদের ভোটের শক্তি এবং আমার প্রতি আপনারা যে বিরল বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, তার ভিত্তিতে আমি পরিশ্রমী, বিপ্লবী ও দুর্নীতিবিরোধী প্রশাসন গড়ে তুলবো।'

তিনি আরো বলেন, ১৮ জুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সারা জাতির প্রেসিডেন্ট এবং কেউ তার পক্ষে ভোট দিক বা না দিক, তিনি সম্পূর্ণভাবে প্রজাতন্ত্রের সকল জনগণের সেবক।

এর আগে শুক্রবার ইরানের ত্রয়োদশতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে একটানা ১৯ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ করা হয়। শনিবার দিবাগত রাত ২টায় নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোট গণনা করা হয়।

শনিবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুর রেজা রহমানি-ফাজলি বলেন, দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট দুই কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার চার জন ভোটার অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬১.৯৫ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হচ্ছেন ইবরাহিম রইসি। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা এক কোটি ৭৯ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৫। তার নিকটবর্তী মোহসিন রেজায়ি পেয়েছেন ১১.৭ ভাগ ভোট। তিনি পেয়েছেন ৩৪ লাখ ১২ হাজার সাত শ' ১২ ভোট।
একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী ও ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আবদুন নাসের হেমমাতি পেয়েছেন ৮.৩ ভাগ ভোট। তিনি ২৪ লাখ ২৭ হাজার দুই শ' এক ভোট পেয়েছেন। চতুর্থ প্রার্থী আমির হোসাইন কাজীজাদেহ হাশেমি ৩.৪ ভাগ ভোট। তিনি প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা নয় লাখ ৯৯ হাজার সাত শ' ১৮।

তিনি আরো জানান, মোট ৩৭ লাখ ২৬ হাজার আট শ' ৭০ ভোট বাতিল করা হয়েছে।

আগামী আগস্টের শুরুতে রইসি বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ইরানের মোট ৭৩ হাজার পাঁচ শ' ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচ দফায় সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৯টা, রাত ১০টা, রাত ১২টা ও দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত ভোট নেয়ার সময় বাড়ায় ইরানি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 ইরানে মোট পাঁচ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার তিন শ' সাতজন নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী মোট ভোটারের ৪৮.৮ ভাগ ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, যা দেশটির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিম্নতম ভোটার অংশ গ্রহণের
রেকর্ড।

এই বছর আগে থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, করোনা মহামারী ও জনপ্রিয় কয়েক জন প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন না পাওয়ায় ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অন্যবারের তুলনায় কম হয়েছে।

এর আগে ১৯৯৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই সময় দেশটির মোট ভোটারের ৫০.৬৬ ভাগ নির্বাচনে ভোট দেন।

এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে ইবরাহিম রইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপর তিন প্রার্থী।

নির্বাচনে একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী আবদুন নাসের হেমমাতি ইনস্টাগ্রামে দেয়া এক বার্তায় রইসিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'আমি আশা করি আপনার সরকার সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বের অধীনে আমাদের জাতির জন্য শান্তি ও উন্নতি বয়ে
আনবে।'

আমির হোসাইন কাজীজাদেহ তার অভিনন্দন বার্তায় বলেন, 'আমি রইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছি, জাতির দ্বারা নির্বাচিত হওয়ায়।'

ইবরাহিম রইসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহসিন রেজায়ি এক টুইট বার্তায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'ইনশাআল্লাহ, আমার সম্মানিত ভাই আয়াতুল্লাহ ড. সাইয়েদ ইবরাহিম রইসির সিদ্ধান্ত নির্ধারণী এই নির্বাচন এক শক্তিশালী জনগণের সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি বহন করবে।'

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকির কালিবাফ পৃথকভাবে তেহরানে রইসির প্রচারণা দফতরে তার সাথে সাক্ষাত করেন।

সাক্ষাতের পর এক সংবাদ সম্মেলনে রুহানি নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ইরানি জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে যে কোনো সহযোগিতায় প্রস্তুত থাকার কথা জানান তিনি।

 অপরদিকে স্পিকার মোহাম্মদ বাকির কালিবাফ জানান, নতুন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতায় আইন পরিষদ প্রস্তুত রয়েছে।

জবাবে ইবরাহিম রইসি বলেন, জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়সহ দেশের সমস্যা সমাধানে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। এই বিষয়ে বিদায়ী প্রশাসনসহ সকলের সাথে আলোচনা করবেন তিনি।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চার বছর মেয়াদে তার দুই দফা দায়িত্ব পালন শেষ করায় তৃতীয় বার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি। ২০১৩ ও ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরপর দুই বার সংস্কারপন্থী এই নেতা নির্বাচিত হন। ইরানের আইন অনুসারে পরপর দুই দফা দায়িত্ব পালনকারী প্রেসিডেন্ট পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী গার্ডিয়ান কাউন্সিল সাত প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়। বুধবার তিন প্রার্থী মোহসিন মেহের আলীজাদেহ, সাইদ জালিলি ও আলী রেজা জাকানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বর্তমানে চারজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়েন। তাদের মধ্যে রক্ষণশীল তিন প্রার্থী; প্রধান বিচারপতি সাইয়েদ ইবরাহিম রইসি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সাবেক প্রধান মোহসিন রেজায়ি, ডেপুটি স্পিকার আমির হোসাইন কাজীজাদেহ হাশেমি ও সংস্কারপন্থী প্রার্থী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুল নাসের হেমমাতি।

মোহসিন মেহের আলীজাদেহ আবদুল নাসের হেমমাতির পক্ষে এবং সাইদ জালিলি ও আলী রেজা জাকানি সাইয়েদ ইবরাহিম রইসির পক্ষে প্রার্থিতা ত্যাগ করেন।

ইরানের নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে মোট ভোটের ৫০ ভাগ লাভ করতে হবে। বিজয়ী প্রার্থী যদি ৫০ ভাগ ভোটের কম পান, তবে শীর্ষ দুই প্রার্থীকে নিয়ে ইরানে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো।

তবে মোট ভোটের ৬০ ভাগের বেশি লাভ করায় সরাসরি হাসান রুহানির পরবর্তী ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সাইয়েদ ইবরাহিম রইসি।

সূত্র : প্রেস টিভি, আলজাজিরা