স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের তাগিদ

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের তাগিদ

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের তাগিদ

আমরা মহান আল্লাহ তাআলার অগণিত নিয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। সুস্থতা তার অন্যতম। অনেকে সুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে না। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার নামই সুস্থতা। এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। ইসলাম সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তোমাদের সব কিছু দিয়েছেন, যা তোমরা তাঁর কাছে চেয়েছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তা নির্ণয় করতে পারবে না, মানুষ অতিমাত্রায় অবিচারকারী, অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৪)

সুস্থতা সব সুখের মূল : হাদিসের ভাষ্যমতে, সুস্থতা সফলতার অন্যতম উৎস। উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সু্স্থ দেহে দিন শুরু করে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নিরাপদে থাকে এবং তার কাছে সারা দিনের খাদ্য মওজুদ থাকে—তাহলে যেন পুরো পৃথিবীর সম্পদ তাকে দেওয়া হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৬)

সুস্থতা সবচেয়ে মূল্যবান : ইসলামের অনেক বিধান ও ইবাদত সুস্থতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন—কেউ চাইলেও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে মসজিদে যেতে পারে না, রোজা রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে, চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ পেলে দেখে দেখে কোরআন তিলাওয়াত করতে পারে না। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি জিনিসের আগে আর পাঁচটি জিনিস মূল্যায়ন কোরো। বার্ধক্যের আগে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে তোমার ধনাঢ্যতাকে, ব্যস্ততার আগে তোমার অবসর সময়কে এবং মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৮৪৬)

পরকালে জিজ্ঞাসাবাদ : কিয়ামতের দিন ছোট-বড় সব নিয়ামত সম্পর্কে বান্দাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন কোনো বান্দার পা তার স্থান থেকে নড়বে না— যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করা না হবে। কিভাবে তার জীবন আতিবাহিত করেছে, অর্জিত ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? কোত্থেকে সে সম্পদ উপার্জন করেছে ও তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং তার দেহশক্তি কোথায় নিঃশেষ করেছে?’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭) 

অসচেতনতা অগ্রহণযোগ্য : সমাজের বেশির ভাগ মানুষ সুস্থতার নিয়ামত সম্পর্কে অসচেতন। রাসুল (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘সুস্থতা ও অবসর এই দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থাৎ তারা এই দুটি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)

সুস্থ ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় : একজন সবল ও শক্তিমান মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রিয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন সবল ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দুর্বল ঈমানদার অপেক্ষা অধিক প্রিয় ও উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৬৭)

ঈমানের পর সুস্থতা সবচেয়ে দামি : রাসুল (সা.) সুস্থতাকে ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে এর জন্য দোয়া করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও (দ্বিন ও দেহের) সুস্থতা চাও। কারণ ঈমানের পর কাউকে সুস্থতার চেয়ে মূল্যবান কোনো কিছু দেওয়া হয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৮)

মুমিনের অসুস্থতাও নিয়ামত : মুমিনের জন্য সুস্থতা যেমন নিয়ামত, তেমনি অসুস্থতাও তার জন্য রহমতস্বরূপ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিনের অবস্থা খুবই বিস্ময়কর। তার সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। এই কল্যাণ মুমিন ছাড়া অন্য কেউ লাভ করতে পারে না। সে সুখে-শান্তিতে থাকলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, আর দুঃখে বা বিপদাপদে কিংবা অন্য কোনো মুসিবতে পতিত হলে সবর করে। প্রত্যকটি তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে সুস্থ থাকার সময়কে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।