ধামাচাপা দিতে ইভটিজিংয়ের অসত্য অভিযোগ আবিস্কার, পুলিশী তদন্তে বুলবুল কলেজের ঘটনায় ফাঁসে যাচ্ছে ছাত্রলীগ

ধামাচাপা দিতে ইভটিজিংয়ের অসত্য অভিযোগ আবিস্কার, পুলিশী তদন্তে বুলবুল কলেজের ঘটনায় ফাঁসে যাচ্ছে ছাত্রলীগ

এক শিক্ষার্থীকে মারপিটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নির্যাতিত ছাত্রকেই নারী উত্যক্তকারী সাজিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল ছাত্রলীগ-

পাবনা বুলবুল কলেজের শ্রেণীকক্ষ থেকে তুলে নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারপিটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নির্যাতিত ছাত্রকেই নারী উত্যক্তকারী সাজিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। মারপিটের পর পরই ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে ফারজানা রহমান নামের এক বান্ধবীকে দিয়ে নির্যাতিত শরিফুল ইসলাম স্বাধীনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অসত্য অভিযোগ তুলে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত করে পুলিশ ঐ নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। পাশাপাশি, স্বাধীনকে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ জুন পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বিভাগীয় প্রধান আলাউদ্দিন সরদারের উপস্থিতিতে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম স্বাধীনকে শ্রেণীকক্ষ থেকে তুলে নিয়ে যায় কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুমন হোসেনের নেতৃত্বে কলেজ কমিটির সহ সভাপতি রাজিব হোসেন আলিফ, সদ্য বিলুপ্ত সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাব্বির আহমেদ জয়, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তপু রায়হান, মইনুল হাসান মুন্নাসহ ৮/৯ জন বহিরাগত সশস্ত্র যুবক।

পরে তারা স্বাধীনকে পার্শ^বর্তী জুবলী ট্যাংক মার্কেটের ছাদে নিয়ে মারপিট শেষে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে, তার পিতা শাহজাহান আলী থানায় ২০ জুন ঐ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে, ১৫ জুন কলেজ ক্যাম্পাসে গায়ে হাত দিয়ে টানা হেঁচড়া, কুপ্রস্তাব দেয়াসহ শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ করেন ফারজানা। ফারজানাকে বাঁচাতেই ছাত্রলীগ নেতারা এগিয়ে এসেছিলো বলে দাবি করা হয়। পুলিশ দু’টি অভিযোগেরই তদন্তে সদর থানার এস আই আবুল কালামকে দায়িত্ব দেয়।

ওসি আরো জানান, স্বাধীনের বিরুদ্ধে ফারজানা যে সব অভিযোগ করেছে, পুলিশী তদন্তে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি অভিযোগের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেন নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীণ ও বানোয়াট অভিযোগ বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অপরদিকে, তারা স্বাধীনকে মারপিটের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় তার পিতার মামলা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় ।
ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম স্বাধীন বলেন, ঘটনার দিন আমাকে মারপিট করে আহত করার পর আমি পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের নাম বলে দেয়ায় তারা হাসপাতালে যাওয়ার পথেই আমাকে অসংখ্য মামলায় ফাঁসানো হবে বলে হুমকি দেয়। পরে জানতে পারি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তপু রায়হানের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী (জিএফ) ফারজানাকে দিয়ে উত্যক্ত করা ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করেছে। আমি ফারজানাকে অসম্মানসূচক কিছুই বলিনি, কলেজের শিক্ষকরা তার সাক্ষী আছেন। আমাকে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই একজন নারীকে জড়িয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করেছে। আমি এ বিষয়েও আইনগত পদক্ষেপ নেব।

উত্যক্তের শিকার হয়েছিলেন কিনা জানতে চেয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমানের কাছে জানতে চাইলে, তিনি এই প্রতিবেদককে তা বলতে বাধ্য নন বলে জানান। ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তার কি সম্পর্ক এ বিষয়েও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম আরো জানান, পুুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এদিকে বহু সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের টর্সার সেল অবিস্কারকদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় আনা হোক।