খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে আরও ২৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধ লাখ ছাড়াল

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে আরও ২৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধ লাখ ছাড়াল

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে আরও ২৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধ লাখ ছাড়াল

এম মাহফুজ আলম: খুলনা বিভাগ করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মৃত্যুর সারিতে ১৫/২০ জনের উপরে  যোগ হচ্ছে। খুলনা বিভাগের প্রায় সব ক’টি জেলায় ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় করোনা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অতি থেকে অতি খারাপের মাত্রা বেড়েই চলেছে।  মৃত্যু আতংক বিরাজ করছে সর্বমহলে। স্বাস্থ্য কর্মীরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অধিকাংশ জেলায় লকডাউন চলছে।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট শনাক্তের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়িয়েছে। করোনা শুরু থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩২২ জনের।

আজ শুক্রবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ সাত জন মারা গেছেন। অন্যদিকে খুলনায় পাঁচ জন, যশোরে পাঁচ জন, ঝিনাইদহে দু’জন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বাগেরহাটে একজন এবং মেহেরপুরে একজন মারা গেছেন।

বিভাগের ১০ জেলায় ২৫ জুন সকাল পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৫০ হাজার ১১৭ জন এবং মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩৯ জনে। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৫ হাজার ৯২২ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৩৩২ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ২৬০ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ১৬১ জনের। মারা গেছেন ২৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৩৪৯ জন।

খুলনার পরেই আছে কুষ্টিয়া। এ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১১ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ১৩৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৯১২ জন। মারা গেছেন ১৮০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ২২২ জন।

ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৭৯ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৭৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ জন। মারা গেছেন ৮০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯৩৯ জন। ঝিনাইদহের একাধিক গণমাধ্যম কর্মী এই প্রতিনিধিকে আশার বাণী বাদে হতাশার কথা জানিয়ে বলেন,‘ যে হারে মুত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে; তাতে আতংক হওয়ারই কথা। কারণ এর আগের দু’ধাপে মৃত্যুর সারিতে গণমাধ্যম কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, চিকিৎসকরাও রয়েছেন। আর এবার তো করোনা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে’।

বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৩ জনের। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৪২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৬৭ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৮ জন।

সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪৮ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৬৭ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২৩২ জন।

যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ১৯১ জন।  এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৭২০ জনের। মারা গেছেন ১২৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৮৮৯ জন।

২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৮ জনের। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৫২ জন।  এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৬১ জন। মোট মারা গেছেন ৩৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯২৯ জন।

মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৫ জন। এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৩৬ জনের। এ সময় মারা গেছেন ২৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২৩৫ জন।

চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১৬ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ৪১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৫৩ জনের। মারা গেছেন ৮২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৯ জন।

মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪৫ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ৪৭ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৪০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪০ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, সীমান্তবর্তী জেলা থাকায় এ বিভাগের পরিস্থিতি খারাপ। বিষয়টি সকলেই অবগত। বিভাগের সকল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন মিলে নানাভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। করোনা সামাল দিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে।