সুসন্তান গড়তে মা-বাবার দায়িত্ব

সুসন্তান গড়তে মা-বাবার দায়িত্ব

সুসন্তান গড়তে মা-বাবার দায়িত্ব

মা-বাবা সন্তানদের পৃথিবীতে আসার মাধ্যম। মা-বাবা ও সন্তানদের মধ্যে রক্ত ও আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। তা সত্ত্বেও পরস্পরের সম্পর্ক সব সময় এক ধরনের থাকে না। অথচ রাসুল (সা.) মা-বাবার খিদমতকে হিজরত ও জিহাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবীর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আমি সওয়াবের আশায় আপনার কাছে হিজরত ও জিহাদের বাইআত করতে চাই।

নবী (সা.) বলেন, তোমার মাতা-পিতার কোনো একজন বেঁচে আছে কি? সে বলল, জি, উভয়ই বেঁচে আছেন। নবী (সা.) বলেন, তুমি কি সত্যিই সওয়াব চাও? সে বলল, জি। তিনি বলেন, অতএব তুমি তোমার মা-বাবার কাছে চলে যাও। তাদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৯)

পৃথিবীর সব ধর্ম ও শিক্ষালয়ে মা-বাবার আনুগত্য ও তাঁদের সেবা করার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু আধুনিক দুনিয়ায় এ ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই মা-বাবার অবাধ্যতা বেড়েই চলছে। সমাজে মা-বাবার একনিষ্ঠ আনুগত্য ও বাধ্যতার নজির কম। তাই ছোটরা বড়দের কাছ থেকে এ ব্যাপারে অনুকরণীয় জ্বলন্ত আদর্শ খুঁজে পায় না। এ ক্ষেত্রে একচেটিয়া সন্তানদের দোষারোপ করার প্রবণতা আছে। প্রকৃতপক্ষে সন্তানদের মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ হলো—

১.   মা-বাবা সন্তানের নৈতিক উন্নতির চেয়ে বৈষয়িক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির বেশি গুরুত্ব থাকে। ফলে তাদের নৈতিকতা তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

২.   সন্তানের মধ্যে আল্লাহর ভয় না থাকার কারণে তারা মা-বাবার অবাধ্য হয়।

৩.   মা-বাবার অনুগ্রহের কথা স্বীকার না করার প্রবণতা মা-বাবার অবাধ্যতা উসকে দেয়।

৪.   মা-বাবা সন্তানকে ছোট থেকেই এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ না দেওয়াও এ ক্ষেত্রে দায়ী।

৫.   মা-বাবা যদি তাঁদের মা-বাবার অবাধ্য হয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর এর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তবে এটি তাঁদের সন্তান তাঁদের সঙ্গে দুরাচার করা বৈধ করে দেয় না। কারণ তাঁরা পাপ করলে আপনিও পাপ করবেন কি? তবে এটা ঠিক যে যেমন কর্ম তেমন ফল আপনি পাবেনই।

৬.   অনেক মা-বাবা সন্তানদের কিছু দেওয়ার ব্যাপারে সমতা বজায় রাখেন না। যার দরুন যে কম পাচ্ছে সে নিজেকে মজলুম মনে করে। তখন সে মা-বাবার অবাধ্য হতে উদ্ধত হয়।

৭.   অনেক মা-বাবা কোনো সন্তান তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার পরও তাকে ভুল বুঝে থাকে অথবা তার ওপর জুলুম করে বা তারা তার কাছ থেকে এমন কিছু চায়, যা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সন্তান তাঁদের সঙ্গে আর ভালো ব্যবহার করতে চায় না। এমন করা ঠিক নয়।

আমাদের এ লেখার উদ্দেশ্য এ কথা অনুধাবন করানো যে সন্তান যেন মা-বাবার অনুগত ও কৃতজ্ঞ থাকতে পারে, সে জন্য মা-বাবারও দায়িত্ব আছে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।