জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল

জিলহজ মাস ঐতিহাসিক ও ইসলামী শরিয়ত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালার বিধান অনুসারে যে চারটি মাস পবিত্র ও সম্মানিত, তার একটি হলো জিলহজ মাস। আর আল্লাহ তায়ালার কাছে এই মাসের প্রথম দশক সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ ।

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে জিলহজ মাসের রাতসমূহের শপথ করেছেন। তিনি বলেছেন শপথ ফজরের ও দশ রাতের। (সূরা ফজর : ১-২) ইবনে আব্বাস রা: ইবনে জুবাইর ও মুজাহিদসহ আরো অনেক মুফাসসির বলেছেন, এ আয়াতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে। ইবনে কাসির রা: বলেছেন, এ মতটিই বিশুদ্ধ। শাওকানি বলেছেন, এ ‘অভিমত অধিকাংশ মুফাসসিরের’। (ফাতহুল কাদির, ৫/৪৩২]

জিলহজের প্রথম ১০দিন হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন। এ মাসের প্রথম দশকে রয়েছে আরাফাহ ও কোরবানির দিন। আর এ দু’টি দিনের রয়েছে অনেক বড় মর্যাদা। যেমন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, আবু কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আরাফার দিনের সাওমের বিনিময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারার আশা করি। (সহিহ মুসলিম : ২৮০৩) 

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে যেসব নেক আমল করা যেতে পারে

১.আল্লাহ তায়ালার জিকির করা : এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে জিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সা: বলেছেন, এ ১০ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহ আকবার) তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে আদায় করো। (মুসনাদে আহমদ : ৬১৫৪, হাদিসটি সহিহ)

২. উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা : এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিনের মহত্ত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল ও তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত। আর এ তাকবিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত প্রচারিত হবে এবং ঘোষিত হবে তাঁর অনুপম তাজিম। জিলহজের প্রথম দশকের দিনগুলোতে পঠনীয় তাকবির হচ্ছে
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ

৩. সিয়াম পালন করা : জিলহজের প্রথম ৯ দিনে সিয়াম পালন করা মুসলিমের জন্য উত্তম। কারণ, নবী কারিম সা: এ দিনগুলোতে নেক আমল করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর উত্তম সব আমলের মধ্যে সাওম অন্যতম। প্রিয়নবী সা:ও এ ৯ দিনে সিয়াম পালন করতেন। তাঁর পতœী হাফসা রা:! বলেছেন- নবী কারিম সা: কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো আশুরার সাওম, জিলহজের ১০ দিনের সাওম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সাওম ও ফজরের ফরজের পূর্বের দুই রাকাত সালাত। (মুসনাদে আহমদ : ২৬৪৫৯]

৪. খাঁটি মনে তাওবা করা : যেহেতু এ মাসের মর্যাদা অনেক তাই এ মাসে খাঁটি মনে তাওবা করা উচিত। কেননা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন ইরশাদ করেছেন : হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাওবা করো বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন। ’ (সূরা তাহরিম : ৮)

৫. হজ ও ওমরাহ আদায় করা : হজ হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন মানুষের মাঝে যাদের সেখানে (মক্কায়) যাবার সামর্থ্য রয়েছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সে ঘরের (কাবা) হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ যদি প্রত্যাখ্যান করে সে জেনে রাখুক নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)

নবী কারিম সা: বলেছেন যে ব্যক্তি হজ করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে। (সহিহ আল বুখারি : ১৪৪৯) আর এ হজ জিলহজ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা যায় না।

৬. ঈদের সালাত আদায় করা : রাসূলুল্লাহ সা: এ সালাত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করেছেন। কোনো ঈদে সালাত পরিত্যাগ করেননি। বরং একে গুরুত্ব দিয়ে তিনি মহিলাদেরও এ সালাতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

৭. কোরবানি করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কোরবানি করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর নবীকে কোরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কোরবানি করুন।’ (সূরা কাওসার: ২)

লেখক : প্রভাষক, সিটি মডেল কলেজ, শ্যামপুর, ঢাকা