যিলহজ্জের প্রথম দশক: অজানা তাৎপর্যপূর্ণ দশটি দিন

যিলহজ্জের প্রথম দশক: অজানা তাৎপর্যপূর্ণ দশটি দিন

যিলহজ্জের প্রথম দশক: অজানা তাৎপর্যপূর্ণ দশটি দিন-

শায়খ আহমাদুল্লাহ

বছরজুড়ে ঈমানদারের আমল ও ইবাদতের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দান করেছেন ইবাদতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। রমজান মাস ইবাদতের মৌসুম, এ কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। রমজানের পর দীর্ঘ মেয়াদি গুরুত্বপুর্ণ ইবাদতের মৌসুম হলো যিলহজ্জের প্রথম ১০দিন। বছরের যেকোন দিনের চেয়ে এই দিনগুলো শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়।  তারগীব ও তারহীব গ্রন্থে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো, (যিলহজ্জের প্রথম) দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা সূরা ফজর ২ ও ৩ নং আয়াতে এই মাসের প্রথম দশ রাতের শপথ করেছেন। সূরায়ে হজ্জের ২৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনসমূহে। সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলে এখানে যিলহজ্জের প্রথম দশককে বুঝানো হয়েছে।  (ইবনে কাছীর)

বুখারীর বর্ণনামতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভাল আমলের জন্য আল্লাহর নিকট এই দিনগুলোর চেয়ে প্রিয় কোন দিন নেই; এমনকি (অন্য সময়ের) আল্লাহর রাহে জিহাদও এই দিনসমুহের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।

ইবনে হাজার আসকালানী রহ: বলেছেন-যিলহ্জের প্রথম দশটি দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো, এই দিনগুলোতে ইসলামের ৫টি রুকন বা মৌলিক কাজের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এদিন গুলোতেও বিদ্যমান। যাকাত বছরের অন্য যেকোন সময়ের মতো এসময়েও আদায় করা যায়। আরাফার দিনে রোযার নির্দেশ থাকায় ইসলামের আরেকটি রুকন- রোযারও নজীরও এই দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন বা হজ্জ এবং কুরবানীর বিধান তো কেবল এই দশকেই পালনযোগ্য।

সুতরাং মাস হিসেবে রামাদ্বান আর দিন হিসেবে এই দশক শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ। একজন ঈমানদের উচিত এদিনগুলোতে ইবাদত বন্দেগীতে বিশেষভাবে মগ্ন হওয়া।

যিলহজ্জের প্রথম দশকের ১০টি আমল:

কুরআন ও হাদীসের আলোকে এই দশকের বেশ কিছু আমল ও করণীয় আছে।    

(১) অধিক পরিমানে আল্লাহর স্মরণ করা। (সূরা হজ্জ ২৮)

(২) নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। (বুখারী মুসলিম)

(৩) অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় পাপের পথ পরিহারে সচেষ্ট থাকা। (বুখারী মুসলিম)

(৪) সামর্থবান হলে হজ্জ করা। (বুখারী মুসলিম)

(৫) কুরবানী করা। (সূরা কাউসার ৩)

(৬) কুরবানিচ্ছুক ব্যক্তি এই দশদিন নখ, চুল, ও অবাঞ্চিত লোম কর্তন না করা। (মুসলিম)

(৭) বেশি বেশি তাকবীর তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা-যথা আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। (বুখারী)

(৮) আইয়ামে তাশরীকে (আরাফার দিন ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্জ আসর পর্যন্ত) প্রতি নামাজের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করা। (বুখারী)

(৯) আরাফার দিনে রোযা রাখা। (মুসলিম)

(১০) ঈদের দিনের সুন্নাহসমূহ পালন করা।

প্রিয় পাঠক, ইবাদতের এই মৌসুমটি আমাদের জীবনে কতোবার এসেছে! কুরআন-হাদীসে বর্ণিত যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের উপরোল্লিখিত গুরুত্ব ও তাৎপর্যের ছাপ কি কখনো পড়েছে? আসুন, এ বছরের যিলহজ্জের প্রথম দশককে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাই। কে জানে আগামী যিলহজ্জ আমাদের ক’জনের বরাতে আছে! আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতের পথে অগ্রসর থাকার তাউফীক দান করুন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক, গবেষক ও চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন