গর্ভাবস্থায় পেটভার? সমাধান জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় পেটভার? সমাধান জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় পেটভার? সমাধান আপনার হাতে- সংগৃহীত ছবি

গর্ভসঞ্চার হল কি হল না, শুরু হয়ে গেল পেটভার, গ্যাস, অম্বল, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য৷ কথায় কথায় ওষুধ চলে না এ সময়। কাজেই কষ্টের শেষ নেই। সকালে জিরা-ভেজানো পানি, রাতে গ্লাসের পর গ্লাস জল, ভরসা বলতে এটুকুই। ফলে বেজায় বিপদে হবু মা। এক শরীর অস্বস্তি নিয়ে দিন কাটে তার। পেট যত বড় হতে থাকে, তত বাড়ে অস্বস্তি।

কেন এমন?
ভারতের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু জানিয়েছেন, “গর্ভাবস্থায় শুরুতেই শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। তার হাত ধরে পাকস্থলী থেকে খাবার নীচে নামার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে পেট একটু ফেঁপে থাকে। তার সঙ্গে প্রথম ১২ সপ্তাহ অম্বল, গলাজ্বালা বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যও থাকে অনেকের। দু-একদিন পেট পরিষ্কার না হলে পেটফাঁপার সমস্যা বেড়ে যায়। এরপর যত সময় যায়, যত পেট বড় হতে থাকে, পাকস্থলীর উপর চাপ তত বেশি পড়ে, সমস্যা বাড়ে তত। বেশি খাওয়া ও শুয়ে-বসে থাকার যুগলবন্দীতে তা বাড়াবাড়ি রূপ নেয় কখনও। বিশেষ করে যে সমস্ত ভাবী মা তেল-ঘি-মাখন-ভাজাভুজি ও মিষ্টি বেশি খান।”

তাহলে উপায়?
“অভ্যাস পালটাতে হবে”, জানালেন ডাক্তার বসু। “প্রচুর খাওয়া, শুয়ে-বসে থাকা, ঘি-মাখন বেশি খাওয়া একদম চলবে না। চলবে না ওষুধপত্রে অনীহাও। প্রয়োজনমতো খাবার ও ওষুধ খেয়ে, ব্যায়াম করে নিজেকে ফিট রাখতে হবে।”

কিন্তু মনে প্রশ্ন, এ সময় তো দু-জনের মাপেই খেতে হয়, কাজেই খাওয়া কমালে বাচ্চার বৃদ্ধি আটকে যাবে না? ঘি-মাখন না খেলে পুষ্টি হবে কী করে? আর ব্যায়াম! এ সময় ব্যায়াম তো নিষিদ্ধ! শুয়ে-বসে থাকাই তো ভাবী মা ও সন্তানের জন্য নিরাপদ!

“ভুল ধারণা”, বললেন ডাক্তার বসু৷ “এ সময় খাবারের পরিমাণ নয়, বাড়াতে হয় পুষ্টির মান। দিনের প্রতিটি খাবার পুষ্টিকর হলে কম খাবারেই ভাবী মা শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মাঝেমধ্যে এক-আধ চামচ ঘি বা মাখন খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু বেশি খেলে এক দিকে যেমন পেটফাঁপা বাড়তে পারে, সূচনা হতে পারে ওজন বৃদ্ধির, যা থেকে ডায়াবেটিস ও আরও নানান জটিলতার আশঙ্কা বাড়ে। আর ব্যায়াম একেবারেই নিষিদ্ধ নয় এ সময়। হালকা ফ্রি হ্যান্ড ও ঘরোয়া কাজকর্ম করলে গ্যাস, অম্বল, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য কম থাকে, ওজন বাড়তে পারে না, গর্ভাবস্থায় যা একান্ত প্রয়োজনীয়।”

অতএব…
১। সহজে হজম হয় এমন পুষ্টিকর খাবার খান, পেট একটু খালি রেখে৷ কারণ এ সময় পাকস্থলীতে জায়গা কমে যায়। পেট বেশি ভরে খেলে আইঢাই করে। অম্বল, বদহজম বেশি হয়। বার বার খিদে পেলে বার বারই খাবেন, তবে অল্প করে।

২। সবুজ শাক-সব্জি খান পর্যাপ্ত। সারা দিন মোটামুটি সচল থাকলে ও হালকা ব্যায়াম করলে গ্যাস হবে না কিন্তু পেট পরিষ্কার থাকবে। এই একই কারণে পানি সারাদিনে ৮-১০ গ্লাস খাবেন।

৩। কম মিষ্টি ফল খান মাপমতো। খুব বেশি ফল খেলে, বিশেষ করে মিষ্টি ফল, ওজন বেড়ে যেতে পারে, যা এ সময় কাম্য নয়।

৪। তেল-ঘি-মাখন যত কম তত ভালো। মশলাও বুঝেশুনে।

৫। ভাত-রুটি-পাস্তা-নুডুল মাপমতো, মাছ, চিকেন, ডিম, ডাল ও অন্যান্য প্রোটিন খান পর্যাপ্ত।

৬। যতই ইচ্ছে করুক মিষ্টি বেশি খাবেন না। এতে গ্যাস হবে, ওজন বাড়বে। খুব ইচ্ছে হলে মূল খাবার খাওয়ার পর টাটকা বা শুকনো ফল খেতে পারেন অল্প করে।

৭। নরম পানীয় খাবেন না। চা, কফি, ফলের রস, যত কম খাবেন তত ভাল।

৮। হালকা ব্যায়াম, হাঁটা, যোগ, রিল্যাক্সেশন ও শ্বাসের ব্যায়াম করুন নিয়মিত।

৯। ঘুমের সঙ্গে আপস করবেন না। পেট ফেঁপে থাকার এক বড় কারণ কম ঘুমোনো।

১০। এতে সমস্যা না কমলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খান।

ওষুধপত্র
গর্ভাবস্থায় কথায় কথায় ওষুধ খেতে বারণ করা হয় ঠিকই। কিন্তু একেবারে খাওয়া যাবে না, এমন নয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অম্বলের ওষুধ, হজমের সুবিধার জন্য কিছু এনজাইম ও পেট পরিষ্কার রাখতে ল্যাক্সেটিভ খেতে পারেন প্রয়োজনমতো। -আনন্দবাজার