রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড : ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর

রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড : ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর

রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড : ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর । ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গ থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত লাশগুলোর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়।

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ শ্রমিকের মধ্যে ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর করেন সিআইডি কর্মকর্তারা এবং ঢামেকে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: মাকসুদুল আলমসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।

আজ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা লাশগুলো মো: আয়াত হোসেন, মো: নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা: সাগরিকা শায়লা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, মোসা: শাহানা আক্তার, মোসা: মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা: ফারজানা, মোসা: ফাতেমা আক্তার, মোসা: নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, মোসা: নাজমা বেগম, রাশেদ, মো: রাকিব হোসেন, ফিরোজা, মো: তারেক জিয়া, মো: রিপন মিয়া, মোসা: শাহানা আক্তার, মো: মুন্না ও রিয়া আক্তারের।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাশগুলো পুড়ে অঙ্গার ও বীভৎস হয়ে গেছে। মুখ দেখে এগুলো চেনার উপায় নেই। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাদের দাঁত ও টিস্যু সংগ্রহ করে পরিবারের সাথে ডিএনএ মেলানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, লাশ নেয়ার জন্য ঢামেক মর্গে স্বজনদের অনেক ভিড় ছিল। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ডাকে লাশের স্বজনরা যাচ্ছেন মর্গের লাশকাটা ঘরের সামনে। সেখানে লাশ দাফন-কাফনের জন্য তাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়ে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়।মেয়ের লাশ নিতে এখানে আসা নেত্রকোনার মোহাম্মদ আলী বলেন, ২৫ দিন অপেক্ষায় ছিলাম। গতকাল মঙ্গলবার ফোন পেয়ে ভোরে চলে আসি। মেয়েকে দেখে চিনতে পারিনি। অন্তত তার শরীরটা মাটিচাপা দিয়ে শান্তি পাবো।

দুপুর থেকেই ঢামেক জুড়ে স্বজনদের আহাজারি। মায়ের জন্য মর্গে আসা জাকিরের কান্না যেন কোনোভাবেই থামছে না। জাকিরের মা জাহানারা বেগম ওই কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন। মাকে নিতে না পারলেও এবার মায়ের লাশ কিশোরগঞ্জের মাতুয়াপাড়ায় নিয়ে যাবেন তিনি।মায়ের কফিনের সামনে আহাজারি করে জাকির বলেন, ‘আমার মা তো চলে গেল। আর তো পাবো না। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। এই আমার আপনাদের কাছে চাওয়া।

১৬ বছরের মুন্নার লাশ নিতে এসেছেন বাবা গিয়াস উদ্দিন। নিজেকে সামলাতে পারবেন না বলে তার সাথে এসেছেন মুন্নার ফুপা কুতুবউদ্দিন ও ফুপু রোকসানা।এছাড়াও কারখানার কর্মচারী শাহীনুরের লাশ বুঝে নিয়েছে ১৪ বছরের তানিয়া, মোহাম্মদ আলীর লাশ নিয়েছে তার বাবা শাহদাত খান। ১২ বছরের হাসনাঈনের নিথর লাশ নিতে এসেছেন তার মা নাজমা।

উল্লেখ্য, ৮ জুলাই সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পুলিশ তাদের চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের আদালতে হাজির করা হলে মালিক আবুল হাসেমসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হাসেমের দুই ছেলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।