মুহাররম মাস : আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

মুহাররম মাস : আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

ক্যালিগ্রাফি : আরিফুর রহমান

আরবি হারাম (حرام) শব্দ থেকে মুহাররম (محرم) শব্দের উৎপত্তি। এর একটি অর্থ হলো পবিত্র। প্রাচীনকাল থেকে যে চারটি মাসকে আরবরা পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করতো।

মুহাররম শব্দের অপর একটি অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ। ইসলামের আবির্ভাবের আগে পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচনার কারণে মুহাররম মাসে যেকোনো প্রকার রক্তপাত ও যুদ্ধ-সংঘর্ষ আরবে সাধারণভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকার এই বিবেচনা থেকেও এই মাসের নাম হয়েছে মুহাররম।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ (৩৬)

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুল্ম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।  (সূরা আত তাওবা-৩৬

৪টি সম্মানিত মাস হচ্ছে-

১. জিলকদ, ২. জিলহজ্জ, ৩. মুহাররম ও ৪. রজব মাস। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَان.

আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন থেকে সময় যেরূপে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেরূপে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যূল-হিজ্জাহ ও মুহাররম তিনটি মাস পরপর রয়েছে। আর এক মাস হল রজব-ই-মুযার যা জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যে অবস্থিত। (সহীহ বুখারী)

এর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে মুহাররম মাস যাকে شَهْرُ اللَّهِ  বা আল্লাহর মাস বলা হয়। বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ গ্ধ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম (রাজা/সিয়াম) হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম)

সম্মানিত মাসসমূহে করনীয় :

১. নিজের উপরে জুলুম না করা, অন্যায় অপকর্ম না করা: 

فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ

“সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুল্ম করো না।” (সূরা আত-তাওবা-৩৬

এ মাসে নিজের শরীরে নিজে আঘাত করা, নিজের উপরে কষ্ট চাপিয়ে নেওয়া, শরীরের উপরে জুলুম করা হারাম। আল্লাহ বলেন,

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল-বাকারা-১৯৫)

 ২. সম্মানিত মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ, ঝগড়া-বিবাদ হারাম :

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ وَصَدٌّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّهِ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (২১৭

“তারা তোমাকে হারাম মাস সম্পর্কে, তাতে লড়াই করা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘তাতে লড়াই করা বড় পাপ; কিন্তু আল্লাহর পথে বাধা প্রদান, তাঁর সাথে কুফরী করা, মাসজিদুল হারাম থেকে বাধা দেয়া এবং তার অধিবাসীদেরকে তা থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট অধিক বড় পাপ। আর ফিতনা হত্যার চেয়েও বড়’। আর তারা তোমাদের সাথে লড়াই করতে থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে দেয়, তারা যদি পারে। আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” (সূরা আল-বাকারা-২১৭)

৩. সম্মানিত মাসসমূহকে যথাযথ সম্মান দেখানো :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنْ رَبِّهِمْ وَرِضْوَانًا وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ أَنْ صَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَنْ تَعْتَدُوا وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (২)

হে মুমিনগণ, তোমরা অসম্মান করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহের, হারাম মাসের, হারামে প্রেরিত কুরবানীর পশুর, গলায় চি‎হ্ন দেয়া পশুর এবং আপন রবের অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অনুসন্ধানে পবিত্র গৃহের অভিমুখীদের। যখন তোমরা হালাল হও, তখন শিকার কর। কোন কওমের শত্রুতা যে, তারা তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বাধা প্রদান করেছে, তোমাদেরকে যেন কখনো প্ররোচিত না করে যে, তোমরা সীমালঙ্ঘন করবে। সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সূরা আল-মায়েদা-২)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمِنًى أَتَدْرُونَ أَيُّ يَوْمٍ هَذَا قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّ هَذَا يَوْمٌ حَرَامٌ أَفَتَدْرُونَ أَيُّ بَلَدٍ هَذَا قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ بَلَدٌ حَرَامٌ أَتَدْرُونَ أَيُّ شَهْرٍ هَذَا قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ شَهْرٌ حَرَامٌ قَالَ فَإِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا.

ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) মিনায় অবস্থানকালে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এটি ক্‌োন দিন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা.) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত দিন। (নবী (সা.)) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্‌ শহর? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা.) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত শহর। নবী (সা.) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্‌ মাস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-ই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত মাস। নবী (সা.) বললেনঃ এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জান, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইয্‌যত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন। (সহীহ আল-বুখারী)

৪. এ মাসে যদি কাফেররা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাহলে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো:

وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা আত তাওবা-৩৬

অন্যত্র বর্নিত হয়েছে,

وَلَا تُقَاتِلُوهُمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِنْ قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ كَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ (১৯১)

“এবং তোমরা মাসজিদুল হারামের নিকট তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সেখানে লড়াই করে। অতঃপর তারা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তবে তাদেরকে হত্যা কর। এটাই কাফিরদের প্রতিদান।” (সূরা আল-বাকারা-১৯১)

الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ (১৯৪)

হারাম মাস হারাম মাসের বদলে এবং পবিত্র বিষয়সমূহ কিসাসের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে, তোমরা তার উপর আক্রমণ কর, যেরূপ সে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা আল-বাকারা-১৯৪)

৫. এ মাসগুলোতে বেশী বেশী তাসবীহ পাঠ করা ও ইস্তেগফার করা:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا (৪১)

ওহে ইমানদারেরা তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো, বেশী বেশী স্মরন। (সূরা আহযাব-৪১)

মুহাররম মাসের মর্যাদা:

৪টি সম্মানিত মাসের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত হচ্ছে মুহাররম মাস। এ মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ গ্ধ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম (রাজা/সিয়াম) হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম)

রমাদানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে মুহাররমের রোজা ফরজ ছিলো :

عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ ، وَمَنْ شَاءَ تَرَكَه.

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশূরা এর সাওম (রাজা/সিয়াম) পালন করত এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)ও এ সাওম পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনও এ সাওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সাওম ফরয করা হল তখন ‘আশূরার সাওম ছেড়ে দেয়া হল, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। (সহীহ আল-বুখারী)

১০ মুহাররমের মর্যাদা :

এই দিনে আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা (আ.) ও বনিইসরাইলদেরকে ফিরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফিরাউনকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এজন্য মুসা (আ.) এদিনে শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখেছিলেন এবং বনিইসরাইলদের রোজা রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَالْيَهُودُ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ ظَهَرَ فِيهِ مُوسَى عَلَى فِرْعَوْنَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لأَصْحَابِهِ أَنْتُمْ أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْهُمْ فَصُومُوا.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল (সা.) মদিনায় এলেন, তখন ইহুদীরা আশূরা (আশুরা)এর দিন রোযা পালন করত। (জিজ্ঞাসা করা হলে) তারা বলল, এদিন মূসা (আলাইহিস সালাম) ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী (সা.) তাঁর সাহাবীদের বললেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে তাদের (ইহুদিদের) চাইতে তোমরাই অধিক হকদার। সুতরাং তোমরাও রোযা পালন কর। (সহীহ আল-বুখারী)

মুসা (আ,) এর বিজয়ী হওয়ার ঘটনা:

إِذْ نَادَاهُ رَبُّهُ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى (১৬) اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى (১৭) فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ تَزَكَّى (১৮) وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى (১৯) فَأَرَاهُ الْآيَةَ الْكُبْرَى (২০) فَكَذَّبَ وَعَصَى (২১)

যখন তার রব তাকে পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় ডেকেছিলেন, ‘ফির‘আউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালংঘন করেছে’। অতঃপর বল ‘তোমার কি ইচ্ছা আছে যে, তুমি পবিত্র হবে’? ‘আর আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাঁকে ভয় কর?’ অতঃপর মূসা তাকে বিরাট নিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অমান্য করল। (সূরা নাযিয়াত-১৬-২১)

ফেরাউন এবার মুসা (আ.) কে বললো,

قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ (২৯)

ফির‘আউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব’। (সূরা শুআরা-২৯)

মুসা (আ.) আক্ষেপ করে এবার বললেন,

وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ (৮৮)

আর মূসা বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি ফির‘আউন ও তার পারিষদবর্গকে দুনিয়াবী জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব, যাতে তারা আপনার পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চি‎হ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। (সূরা ইউনুচ-৮৮)

আল্লাহ তাআলা বললেন,

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ (৯০)

আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত’।  (সূরা ইউনুচ-৯০)

آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ (৯১)

‘এখন অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত’। (সূরা ইউনুচ-৯১)

فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ (৯২)

‘সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল’। (সূরা ইউনুচ-৯২)

১০ মুহাররমে করনীয়:

মুহাররম মাসে রোজা রাখার চেষ্টা করা কারন এ মাসের রোজার ফজিলত অনেক বেশী।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ فَقَالُوا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِى أَظْهَرَ اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَبَنِى إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ فَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ. فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- ্র نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ গ্ধ. فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্নণা করেন, নবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহুদীগণ ‘আশূরা (আশুরা) দিবসে সাওম (রোজা/সিয়াম) পালন করে। তাদেরকে সাওম পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস সালাম) ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানার্থে সাওম পালন করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চাইতে আমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের আদেশ দেন। (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (সা.) এ মাসে বেশী রোজা রাখতেন:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ‘আশূরার দিনের সাওমের উপরে অন্য দিনের সাওম (রোজা/সিয়াম) কে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখি নাই এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)। (সহীহ আল-বুখারী)

রোজা রাখার বিধান:

১০ মুহাররমসহ ২দিন রোজা রাখা: রোজা রাখতে হবে ৯-১০ অথবা ১০-১১ মুহাররম।

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا গ্ধ

ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো, এবং ইহুদীদের বিপরিত কাজ করো, একদিন আগে অথবা একদিন পরের সাথে মিলিয়ে রোজা রাখো। (মুসনাদে আহমদ)

عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ - إِنْ شَاءَ اللَّهُ - صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ গ্ধ. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّىَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশূরা (আশুরা)র দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম পাননের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ইনতেকাল হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম)

আশুরার রোজার ফজিলত:

্র ثَلاَثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ গ্ধ.

রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন,প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন করা এবং রমাযান মাসের সওম এক রমাযান থেকে পরবর্তী রমাযান পর্যন্ত সারা বছর সওম পালনের সমান। আর আরাফাহ দিবসের সওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। আর আশুরার সওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারাহ হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম)

বর্জনীয়

১. তা’যিয়া বানানো অর্থাৎ, হযরত হুসাইন রাযি. এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী শিরকী কাজ।

২. নিজে নিজের পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা এবং মর্সিয়া করা। আল্লাহ বলেন,

وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল-বাকারা-১৯৫)

৩. মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়েয।

৪. ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। এগুলো যারা করে, দর্শক ও শ্রোতা উভয়ের প্রতি নবী কারীম (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাউদ  ও  ইবনে মাজাহ)

৫. যারা জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এটা হারাম।

عَنْ عَبْدِ اللهِ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ আল-বুখারী)

৬. কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো।

৭. তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (৬)

আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।  (সূরা লুকমান-৬)

আশুরার দিন সম্পর্কে ভ্রান্ত বর্ণনা সমূহ:

এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন, এইদিন হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিলো এবং বেহেশতে প্রবেশ করান

এদিন হযরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

হযরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন।

হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

হযরত ইদরীস (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়।

হযরত সোলাইমন (আ.) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।

এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে, ইত্যাদি এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে সিহাহ সিত্তাহর কিতাবসহ প্রসিদ্ধ কোন হাদীস গ্রন্থে কোন বর্ণনা নেই।

১০ মুহাররম কারবালার বিয়াগান্ত ঘটনা:

রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের অনেক পরে, ইসলামী খিলাফত শেষে হিজরি ৬০ সালের ১০ মুহাররম ইমাম হুসাইন (রা.) ও রাজতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ইয়াজিদের সাথে এক অসম যুদ্ধ সংঘটিত হয় সে যুদ্ধে আহলে বাইতের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ শাহাদত বরন করেন ইমাম হুসাইন (রা.)। ঘটনাচক্রে একই তারিখে কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করায় শুধু এ ঘটনাকে আশুরার ইতিহাস বলা হয়ে থাকে যা মেনে নেওয়া কখনোই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত নয়।

তবে ইমাম হুসাইন (রা.) সেদিন অসত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে দুনিয়ার অনেক সুযোগ সুবিধা নিতে পারতেন কিন্তু তিনি সেটা গ্রহন না করে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়েছেন। এঘটনা উল্লেখ করে আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ইসলাম জিন্দা হোতা হে হর কারবালা কি বাদ। কারবালার শাহাদাতের পর ইসলাম নতুন করে পুথিবীতে আবিভ’ত হয়েছে বা ব জীভন পেয়েছে। আল্লাহ আমাদের এ ঘটানা থেকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।।

ড.হাবিবুর রহমান : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিন,লেখক ও গবেষক।