আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন

যেখানে ভয় ও আনুগত্য আছে সেখানে ভালোবাসা থাকতে পারে আবার না-ও থাকতে পারে, কিন্তু যেখানে ভালোবাসা আছে সেখানে অবশ্যই ভয় ও আনুগত্য থাকবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ওইসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে তেমনি ভয় করো, যেমন ভয় করা উচিত। আর মুসলিম অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়’ (সূরা আলে ইমরান-১০২)। আয়াতে আল্লাহ তায়ালাকে পূর্ণরূপে ভয় করার অর্থ এই যে, তাঁর আনুগত্য করবে, অবাধ্য হওয়া যাবে না, তাকে সদা সর্বদা স্মরণ করবে, কোনো সময়েই তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, কৃতঘ্ন হওয়া যাবে না।

অতঃপর আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে, ‘তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ অর্থাৎ আজীবন ইসলামের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকো, যাতে মৃত্যুও এর ওপরই হয়। এ মহান প্রভুর নিয়ম এই যে, মানুষ স্বীয় জীবন যেভাবে পরিচালনা করে সেভাবেই মহান প্রভু তার মৃত্যু দিয়ে থাকেন। যার ওপর মৃত্যু সংঘটিত হবে তার ওপরই কিয়ামতের দিন তাকে উত্থিত করবেন।
মানুষ নানা কারণে একে অপরকে ভয় করে। চোর পুলিশকে ভয় করে মার খাওয়ার ভয়ে, চাকর মালিককে ভয় করে অতিরিক্ত কাজ ও পারিশ্রমিক যথাযথ না পাওয়ার ভয়ে, পথিক ঠগবাজদের ভয় করে হাতের থলে লুট হওয়ার ভয়ে।

এখানে মুমিন ব্যক্তিরাও কি তেমন কোনো কারণে ভয় করবে? একদমই না! বরং মুমিনরা আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন হওয়ার ভয়ে। মাবুদ ও তার বান্দার মধ্যে বিশেষ চুক্তি রয়েছে, যে চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মাবুদ ও বান্দার ভালোবাসার পরিপূর্ণতা পায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে: অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হলো মহান সাফল্য’ (সূরা তাওবা-১১১)।

মুমিনদেরকে জান্নাত লাভের জন্য মাবুদের সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনপূর্বক ঈমান আনয়ন করে মুমিন হয়। অতঃপর মুমিনরা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করার লক্ষ্যে নিজের অভিলাষ বিসর্জন দিয়ে মাবুদের দরবারে আত্মসমর্পণ করে শরয়ি বিধান পালনপূর্বক মুসলমান হতে হয়। কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহকে ভয় করেই ইবাদত করে তাহলে তার ইবাদত হবে গতানুগতিক ধারার আদেশ পালনের ইবাদত, কিন্তু কেউ যদি মাবুদের ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ ইবাদত করে তবে তার ইবাদতে থাকবে একাগ্রতা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা। কোনো ব্যক্তি একাগ্রতার সাথে ইবাদত না করলে কখনো তার ইবাদত কবুল হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি এ কিতাব হকসহ আপনার প্রতি নাজিল করেছি।

কাজেই দ্বীনকে আল্লাহরই জন্য খালিস করে শুধু তাঁরই দাসত্ব করতে থাকুন’ (সূরা জুমার-০২)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনের সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াতে বলেন, ‘সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি সারা জাহানের রব।’ অতঃপর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যিনি মেহেরবান দয়াময়’। এখানে প্রথম আয়াতে মহান রবের বড়ত্ব প্রকাশে মানুষ যেহেতু ভয় না পায় সে জন্য সাথে সাথেই দ্বিতীয় আয়াতে মহান রবের দয়ার কথা বলেছেন। যাতে মানুষ আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি তার দয়ার কথা স্মরণপূর্বক তাকে ভালোবাসতে পারেন।

সৃষ্টিকুল কায়েনাত ভালোবাসার ফল। হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি ছিলাম গোপন ভাণ্ডার; ভালোবাসলাম প্রকাশ হতে, তাই সৃজন করলাম সমুদয় সৃষ্টি।’ আল্লাহর কুদরতের জগতে ভালোবাসাই হলো প্রথম সম্পাদিত ক্রিয়া বা কর্ম। এই ভালোবাসা পবিত্র কুরআনে সাতটি পর্বে ৬৩ বার উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুসরণ করতে হবে।

‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার নবী সা:-এর অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং সব মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় (ভালোবাসার বস্তু) না হই’ (বুখারি শরিফ)। রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘যে যাকে ভালোবাসে সে (পরকালে) তার সাথে থাকবে’ (মুসলিম শরিফ)। হাদিসে আরো রয়েছে, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে’ (নাসায়ি শরিফ)। নবীজী সা: বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’ (আবু দাউদ শরিফ)।

রাসূলুল্লাহ সা: প্রায়ই এই দোয়া করতেন যে, ‘হে আল্লাহ! আপনার ভালোবাসা চাই, আপনার ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা চাই; আর সে আমল করার তৌফিক চাই, যে আমল করলে আপনার ভালোবাসা লাভ করা যায়’ (মুআত্তা ইমাম মালিক)।
সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা ও ভালোবাসা জরুরি। কোনো ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। যার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত। মহান প্রভু আমাদেরকে তার ভালোবাসার অসীম সাগরে ডুবে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।