যষ্টিমধুর উপকারিতা
যষ্টিমধু
রাসায়নিক ওষুধের বদলে প্রাকৃতিক ভেষজের ব্যবহার আজকাল অনেকেই চাইছেন, কারণ তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম ও অন্যান্য উপকার বেশি। তাই যষ্টিমধু বা মুলেঠি হল এমনই এক ভেষজ যা অনেকটাই উদ্দেশ্যসাধন করতে পারে ।
যষ্টিমধু, যাকে সাধারণভাবে মুলেঠি বা লিকোরিস বলা হয়, ওষধিগুণ থাকার জন্য বহুকাল ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহার করা হচ্ছে । এর বৈজ্ঞানিক নাম Glycyrrhiza Glabra, এবং এটা ফাবাসিয়া গোত্রের অন্তর্গত । ওষধিগুণের জন্য এর শিকড়ই সবথেকে উপকারী ।
যষ্ঠিমধুর কয়েকটি গুণের কথা জানালেন ডক্টর রঙ্গনায়কুলু:
১. হাইপার অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রাইটিস
দৈনন্দিন কিছু অভ্যেসের জেরে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য হাইপার অ্যাসিডিটি তৈরি হয়। যষ্টিমধু অ্যান্টাসিডের মতো কাজ করে এবং পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্য ইনফ্লেমেশন এবং আলসার প্রতিরোধেরও ক্ষমতা রয়েছে।
ডোজ: খাওয়ার আগে দিনে দুবার জল দিয়ে যষ্টিমধুর গুঁড়ো।
২. আলসার
যষ্টিমধুর মাধ্যমে মুখের আলসার সারে। যষ্টিমধু ভেজানো জল ব্যাথা ও সংবেদনশীলতা কমায় এবং তা দিয়ে গার্গল করলে আলসারের আকারও ছোট হয় । এছাড়াও লিকোরিসের রসের মধ্যে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে, যা এইচ- পাইলোরি সংক্রমণের ফলে তৈরি পেপটিক আলসার উপশম করে ।
ডোজ: যষ্টিমধু ভেজানো জল, গার্গল ৷
৩. কাশি ও গলাব্যথা
ষ্টিমধু এক্সপেক্টোরান্টের মতো কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান থাকায় এটা সংক্রমণ ও গলাব্যাথা কমায়, যা কাশির সময় আমরা অনুভব করি।
ডোজ: (কাশির জন্য) যষ্টি ২ গ্রাম + সিতোপালাদি চূর্ণ ২ গ্রাম + মধু ৷
৪. একজ়িমা
একজি.মা হল এমন একটা অবস্থা যেখানে ত্বকের নানা অংশ লাল হয়ে জ্বালা করে এবং চুলকোতে থাকে। যষ্টিমধুর পেস্ট এবং তেলের প্রলেপ চুলকানি, লাল ভাব ও ফুলে যাওয়া আটকায়।
ডোজ: যষ্টিমধুর পেস্ট ও তেল ৷
৫. পেশির ক্র্যাম্প পেশির শিথিল করার ক্ষমতা থাকায়, যষ্টিমধু মাসল ক্র্যাম্পের ক্ষেত্রেও উপকারী । এতে ফাইব্রোমায়ালজিয়া কমে ।
ডোজ : দিনে দুবার খাওয়ার পর উষ্ণ দুধের সঙ্গে ৩ গ্রাম ষষ্টিমধু ।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
-হাইপারটেশন থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যষ্টিমধু রক্তচাপ বাড়াতে পারে । কিন্তু এটা একমাত্র দিনে ১০ গ্রামের থেকে বেশি ডোজ়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
- দীর্ঘদিন খেলে এতে ডায়াবিটিস মেলিটাসও হতে পারে ।
অন্যান্য উপকার
-ত্বককে উজ্জ্বলতর করে ৷
- পেপটিক আলসার সারায় ৷
- মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে ৷
- লিভারকে রক্ষা করে ৷
- মহিলাদের মনোপজের সময় হট ফ্ল্যাশ কমায় ৷
- শ্বাসগ্রহণ প্রক্রিয়া উন্নত করে ৷
সতর্কতার দিকগুলো
● দিনে ১০ গ্রামের থেকে বেশি খাবেন না ৷
● চার সপ্তাহের বেশি টানা খাবেন না ।
● গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলুন।
● সন্তানকে স্তন্যদান করলে, দিনে ৬ গ্রামের বেশি খাবেন না।
● বেশি হাইপারটেনশন, কিডনির সমস্যা, হাইপোক্যালেমিয়া, এবং কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওরের রোগীদের ক্ষেত্রে যষ্টিমধু খাওয়া নিষেধ ।
সুতরাং, রাসায়নিক ওষুধের বদলে প্রাকৃতিক ভেষজের ব্যবহার আজকাল অনেকেই চাইছেন, কারণ তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম ও অন্যান্য উপকার বেশি। তাই যষ্টিমধু বা মুলেঠি হল এমনই এক ভেষজ যা এই উদ্দেশ্যসাধন করতে পারে।