কাচকি মাছের চানাচুর এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার কেন পুষ্টিকর

কাচকি মাছের চানাচুর এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার কেন পুষ্টিকর

কাচকি মাছের চানাচুর এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার কেন পুষ্টিকর

চানাচুর বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। সামনে পেলে মুখে না দিয়ে থাকা যায় না। আবার অনেকে আছেন একবার খাওয়া শুরু করলে থামতে পারেন না। কিন্তু চিন্তা করুন তো কাচকি মাছের চানাচুর।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য প্রযুক্তি বিভাগের একটি গবেষণা দল চানাচুর ছাড়াও, বাদাম ও তিলের কটকটির সাথেও কাচকি মিশিয়েছেন। উদ্দেশ্য এর পুষ্টিগুণ বাড়ানো।

কাচকি মাছের চানাচুর

চানাচুর আর কাচকি মাছের মিশ্রণ শুনতে হয়ত একটু অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক মোঃ নুরুল হায়দার বলছেন এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। তিনি এর প্রস্তুত প্রক্রিয়া বর্ণনা করছিলেন।

শুরুতে মাছগুলোকে পরিষ্কার করা হয়েছে, এরপর মাছগুলোকে একটি যন্ত্রে বাতাস দিয়ে শুকোনো হয়েছে, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন ল্যাবরেটরিতে এর পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে।তারপর ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হয়েছে। এর ফলে মাছটি খেতে মুচমুচে ও সুস্বাদু হয়। কড়া ভাজার কারণে এর আর্দ্রতা কমে যায় বলে বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়।

অন্যদিকে বেশিদিন মুচমুচে থাকে। এছাড়া এভাবে ভাজার কারণে মাছ খুব ভালভাবে জীবাণু মুক্ত হয়।এরপর ভাজা মাছকে চানাচুরের সাথে মেশানো হয়। চানাচুরের মধ্যে এমনিতেই অনেক কিছুর মিশ্রণ থাকে। যেমন বেসনের তৈরি বুন্দিয়া, লম্বা ঝুরি, বাদাম, বুট, মটরশুঁটি, বিভিন্ন রকম ডাল ভাজা ইত্যাদি।

ডা. হায়দার বলছেন, "চানাচুরের পুষ্টিগুণ এমনিতেই ভাল। এতে কাচকি মাছ মেশানোর ফলে এর পুষ্টিগুণ আরও বাড়ল। মুচমুচে মাছ যুক্ত হওয়ায় খাবারটির স্বাদেও মজা হল।"তিনি বলছেন, মাছ মেশানোর পর ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেড়েছে।

বাদাম এবং তিল কটকটি

যে পিনাট বার ও সেসেমি বার মৎস্য প্রযুক্তি বিভাগের এই গবেষকরা তৈরি করেছেন সেগুলো দেখতে ছোটবেলার সেই বাদাম এবং তিল কটকটির মতোই।তবে এক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে এর সাথে মেশানো হয়েছে ভাজা কাচকি মাছের গুড়ো।যা চোখে দেখা যাবে না কিন্তু খাওয়ার সময় স্বাদ পাওয়া যাবে।

এগুলো বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে বাদাম, মাছ, তিল এবং গুড়। মাছ, তিল ও বাদাম ভেজে নেয়ার পর এর সাথে আখের গুড় মেশানো হয়।মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে সমান করার পর কিছুটা গরম থাকতেই লম্বা করে কেটে ফেলা হয়েছে।কিছুক্ষণ রেখে দিলে এগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠবে।

কেন কাচকি মাছ?

অধ্যাপক হায়দার বলছেন, "আমি জাপানে পিএইচডি করেছি। সেখানে দেখেছি ছোট ছোট যেসব মাছ আছে, সেগুলোকে তারা অনেকটা চানাচুরের মতোই স্ন্যাক হিসেবে খায়। সেগুলো চিপসের মতো প্যাকেট করে দোকানে বিক্রি হয়। বাংলাদেশেও মলা, ঢ্যালা, কাচকি এরকম অনেক ছোট মাছ রয়েছে।"তিনি বলছেন, কাচকি মাছ খুব ছোট হলেও এর পুষ্টি কিন্তু অনেক। এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল, আয়রনের খুব ভাল উৎস।এই মাছ কাটার ঝামেলা নেই। নুড়ি, পাথর, ছোট শামুক বেছে নিলেই হল।

"আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে ছোট শিশুরা ছোট মাছ খেতে পছন্দ করে না। শিশুদের কিন্তু এই ছোট মাছ খাওয়ানো খুব প্রয়োজন। মাছে যে আমিষ পাওয়া যায় সেটি সবচেয়ে ভাল। কাচকি মাছ আমরা মাথা, চোখ থেকে শুরু করে পুরোটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। এটাকে মেশানোর ফলে প্রচলিত একটি খাবারের পুষ্টিগুণ আরও অনেক বেড়ে গেল।"এখন এগুলো বাজারজাত করার জন্য খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে নমুনা পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি