পাবনায় গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

পাবনায় গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

পাবনায় গোলাগুলি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

রোববার গোলাগুলি,কাঁদুনেগ্যাস নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে পাবনায় একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। 

পাবনা সদর উপজেলার হিমায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরঘোষপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম মধু  ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) আলাউদ্দিন মালিথার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদুনেগ্যাস, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এসময় ৭/৮ জন অঅহত হন।

প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, নৌকা প্রতীকের ১৫ থেকে ২০ জন সমর্থক বুথের মধ্যে ঢুকে ৩ টি ব্যালট পেপার বইয়ে সিল মারতে থাকে। এখবর পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা জোট বেধে বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় মুহূর্মুহু বোমার বিস্ফোরণে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থার বেগতিক হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। 

খবর পেয়ে নিকটস্থ বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ১০/১২ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ গ্রহণ বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে চরঘোষপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের প্রায় শেষের দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ব্যালট পেপার ছিনতাই করার চেষ্টা করলে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা বাধা  দেন।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পর ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয় এবং ভোট দেয়ার জন্য মাইকিং করে আতংকিত ভোটারদের ভোট দিতে আহ্বান করা হয়।চরঘোষপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের ইনচার্জ (এসআই) তরিকুল ইসলাম বলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাই করার চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ২৪ রাউন্ড গুলি, ৪ টি রাবার বুলেট ও ২০টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়।পাবনা সদরের রিটার্নিং অফিসার ও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার কায়ছার আহমেদ চরঘোষপুর কেন্দ্রে ঝামেলার কথা স্বীকার করে বলেন,‘উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণেভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

পাবনা সদর উপজেলার হিমায়েতপুর ইউপিতে কেন্দ্র দখল করে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ( মোটরসাইকেল) এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করা হয় নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার আগেই নজরুল ইসলাম হাবু উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পাঁচ নারী ও তিন পুরুষ এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টরা বলেন, সকালে কেন্দ্রে প্রবেশ করার মুহূর্তে নৌকার ব্যাচ পরা কয়েকজন যুবক এসে মোটরসাইকেলের এজেন্ট জানার পর হাত থেকে কার্ড কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে তাড়িয়ে দেয়। নারীদের বুথে পুরুষরা এসে ভোট কেটে ব্যালট ভর্তি করে নেয়। 

মোটরসাইকেল প্রতীকের নারী এজেন্ট ফেরদৌসি বেগম, নাসিমা, আফরোজা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন এজেন্ট  জানান, ভোট গ্রহণের কিছু সময় আগে আমরা এজেন্টের কার্ড নিয়ে ভোট কেন্দ্র প্রবেশ করার সময় নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা এসে কার্ড ছিঁড়ে ফেলে। তখন তারা বলেন, মোটরসাইকেলের কোনো এজেন্ট এখানে থাকতে পারবে না। তখন আমরা প্রিসাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানালে তারা তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি।

তারা আরও বলেন, এখানে নারীদের বুথে পুরুষ ঢুকে নৌকার প্রতীকে অবাধে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের পক্ষে সহযোগিতার অভিযোগ করেছেন তাড়িয়ে দেয়া এজেন্টরা।  

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকালে নজরুল ইসলাম হাবু উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নজরুল ইসলাম হাবু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার  মোঃ আজমল হোসেন বলেন, এখানে কোনো এজেন্টকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ (এসআই) কামরুজ্জামান বলেন, এখানে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।পাবনা সদরের রিটার্নিং অফিসার ও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার কায়ছার আহমেদ বলেন, এখানে যতটুকু ঝামেলা হয়; পরে তা স্বাভাবিক হয়। 

চরঘোষপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দে ভোট দিতে আসা কয়েকজন ভোটার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে  ভোটগ্রহণ চলাকালীন হঠাৎ করে বিকেলে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের  চেষ্টা চালায়। এ সময় গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল নিক্ষেপ করে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। হিমায়েতপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের আলাউদ্দিন মালিথা বলেন, ওই কেন্দ্রে সকাল থেকেই বহিরাগত নৌকার লোকজন হামলা করার চেষ্টা করে। প্রশাসনের কড়াকড়িতে কেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা নস্যাৎ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে কেন্দ্রে হামলা করে গুলি ছুঁড়েছে তারা। জনসমর্থন হারিয়ে নৌকার প্রার্থী  কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের বের করে  দেয়াসহ নৌকার পক্ষে ভোট কেটে নিয়েছে। অনেক জায়গায় আমার সমর্থকদের মারধর করেছে।

তবে নৌকার প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম মধু বলেন,‘বিদ্রোহী প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় জেনে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকেরাই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

এছাড়া একদন্ত ইউনিয়নের ডেংগারগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহসিন আলী মোল্লার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করার চেষ্টাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলাল সরদারের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। এসময় দৌড়াদৌড়িতে বেশ কয়েকজন মহিলা ভোটারসহ ৫/৬ আহত হন। এসময় কেন্দ্রে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার জিএম জাকারিয়ার বলিষ্ঠ ভূমিকায় বিজিবি সদস্যরা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের খালিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ১০/১২ জনের একদল যুবক ওই কেন্দ্রের দোতলায় নৌকা প্রতীকে ব্যালট পেপারে সিল মারে। সাংবাদিক বা স্ট্রাইকিং ফোসের গাড়ি গেলে তারা দ্রুত সঁটকে পড়ে। সেখানে অবস্থানরত অনেকে অভিযোগ করেন পুলিশের প্রহরায় মূলত সিল মারার মহরা চলছে। তবে ওই কেন্দ্রে কোন সমস্যা  নেই বলে প্রিসাইডিং অফিসার শওকত ইমরান জানান।