ভারত জুড়ে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের করোনা

ভারত জুড়ে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের করোনা

ভারত জুড়ে পুলিশ এবং চিকিৎসকদের করোনা

কলকাতার কসবা থানার বাইরে তৈরি হয়েছে প্যান্ডেল৷ সেখানে বসেই কাজ করছেন পুলিশকর্মীরা৷ ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে৷ কারণ, হুহু করে কোভিড বাড়ছে৷ কলকাতায় এ দৃশ্য এখন আর ব্যতিক্রম নয়৷ প্রায় সমস্ত পুলিশ স্টেশনেই হাহাকার শুরু হয়েছে৷ গত কয়েকদিনে বড়বাবু থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় ২২৫ জন পুলিশ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ প্রতিদিন সংখ্যাটি লাফিয়ে বাড়ছে৷ ফলে থানায় কাজ চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ছে৷ শুধু কলকাতা নয়, মুম্বই, দিল্লি, পাটনার অবস্থাও তথৈবচ৷ প্রতিদিন শয়ে শয়ে পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছে৷ 

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের চিত্র

গোটা দেশে এখনো পর্যন্ত ১৭০০ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন৷ প্রতিদিন সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত কলকাতা এবং বিহারে৷ কলকাতায় চারশর বেশি চিকিৎসক আক্রান্ত৷ বিহারে ৩০০৷ এছাড়াও মুম্বই এবং দিল্লিতেও চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনক৷ ডাক্তার সাত্যকি হালদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘প্রতিদিনই বাড়ি ফেরার সময় মনে হয়, আরেকটা দিন বেঁচে গেলাম৷ এ এক অদ্ভুত ঝুঁকি৷’’

দেশজুড়ে পুলিশকর্মীদের পরিস্থিতি

পুলিশকর্মীদের অবস্থাও ভয়াবহ৷ একটি পরিসংখ্যা বলছে, গড়ে ভারতে প্রতিদিন নব্বই জন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন৷ মুম্বইয়ে একদিনে ৯৩ জন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন৷ কলকাতায় সংখ্যাটি অনেক বেশি৷ 

কলকাতা পুলিশের করোনা

গত কয়েকদিনে শুধুমাত্র ভবানীপুর থানায় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন৷ কসবা, বড়বাজার, উল্টোডাঙা, মুচিপাড়া, একবালপুর থানায় করোনা আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে৷ মানিকতলা, শেক্সপিয়র সরণী থানার অবস্থাও তথৈবচ৷ এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ থানার বাইরেই ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে৷ কোথাও বাঁশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে থানার মূল ফটকের বাইরে৷ কোথাও আবার দড়ি লাগানো হয়েছে৷ অধিকাংশ থানাতেই মূল গেটের সামনে সেন্ট্রি দাঁড় করানো হয়েছে৷ থার্মাল চেক করে তারা একবারে একজন ব্যক্তিকে থানার ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন৷ কিন্তু তাতেও করোনা রোখা সম্ভব হচ্ছে না৷

কসবা থানার এক অফিসার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ এভাবে কতদিন কাজ চালানো যাবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা হচ্ছে৷’’ একই বক্তব্য নিউ মার্কেট থানার আরেক পুলিশ অফিসারের৷ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়েও তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ গল্ফগ্রিন থানার এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, ‘‘যে-ই সামনে আসছে, তাকেই মনে হচ্ছে পজিটিভ৷ এ এক অদ্ভুত ভয়৷’’

কলকাতায় হাসপাতালের পরিস্থিতি

কলকাতার হাসপাতালগুলির পরিস্থিতিও ভয়াবহ৷ গত কয়েকদিনে অন্তত ৩০০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ এরমধ্যে শুধুমাত্র এনআরএস হাসপাতালেই আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী৷ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে সংখ্যাটি ৮০৷ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এখনো পর্যন্ত আক্রান্ত সাত৷ চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন৷ রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজিতে আক্রান্ত ১৫৷ আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে ৩৫ জন আক্রান্ত৷ এছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মী এবং অফিসার করোনায় আক্রান্ত৷

চিকিৎসকদের বক্তব্য, যেভাবে করোনা বাড়ছে, তাতে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ তিনগুণ হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে কীভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ বস্তুত, রাজ্যের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে কোনো কোনো বিভাগ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধও রাখতে হচ্ছে চিকিৎসকের অভাবে৷

সূত্র  : ডয়েচে ভেলে