বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাবনার পেঁয়াজ চাষীরা

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাবনার পেঁয়াজ চাষীরা

ছবি: প্রতিনিধি

পাবনা প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট অসময়ে বৃষ্টি জেলার পেঁয়াজ চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তা পুষিয়ে ওঠতে পেঁয়াজ চাষীদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে বীজ চারা তৈরি করায় অনেকটা দুশ্চিন্তার ছাপ নেই তাদের। হঠাৎ অমৌসুমি বৃষ্টিতে অধিকাংশ পেঁয়াজ বীজতলার ক্ষতি হওয়ায় ফলন হারানোর আশঙ্কায় কৃষকরা। ডিসেম্বরে দু’দিনের টানা বৃষ্টির কারনে বীজ চারা নষ্ট হওয়া এবং বর্তমান মাটি নরম থাকায় এ অঞ্চলে বিশেষ করে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলাতেই পেঁয়াজ চাষ নাবি হয়ে গেছে। ফলে ফলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন পেঁয়াজ চাষীরা। 

শুক্রবার পাবনা সদর উপজেলার বকশিপুর গ্রামের মসলেম উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে বলেন, "এই মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য নয় বিঘা জমি প্রস্তুত করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক বর্ষণে আমার সব বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পরে নতুন করে বীজতলা করলেও ভালো হয়নি। এখন বীজ চারা কিনে সব জমিতে লাগানো সম্ভব নয়।”

কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে জেলার বিপুল সংখ্যক কৃষক জড়িত। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষকরা জানালেও কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি ক্ষতি হয়নি।

শুক্রবার পাবনা সদর উপজেলার ময়েন উদ্দিন, আতিক মোল্লা, মজিবর রহমান, অজিম প্রামাণিক জানান, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে তাদের পেঁয়াজের সব বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে চান। কিন্তু এ জন্য তাদের কাছে এখন পর্যাপ্ত টাকা নেই।

"পেঁয়াজের বীজ চারা কেনার জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া পাম্প ব্যবহার করে আমাদের ফসলের জমি  থেকে স্থবির পানি অপসারণ করতে প্রচুর খরচ হয়েছে, যা ব্যয়বহুলও।"

বর্তমান পেঁয়াজ বীজ চারা ক্রয় করা অনেক কৃষকের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি ) বিখ্যাত হাট হাজিরহাটে দেখা যায়, এক আটি পেঁয়াজ বীজের দাম ৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাসপাড়ার বীজ বিক্রেতা আসলাম মোল্লা জানান, চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ আটি বীজ চারা প্রয়োজন হয় এক বিঘা জমিতে। এ হিসেবে বিঘা প্রতি বীজের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ টাকাসহ মোট খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বহু কৃষক অর্থের অভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে বকশিপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী, মসলেম উদ্দিন ও আজির উদ্দিন জানান।

চরতারাপুর ইউনিয়নের কলেজ শিক্ষক এস এম আলাউদ্দিন বলেন, সরকার এখনই চাষীদের পাশে না দাঁড়ালে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৬ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৫২ হাজার ৪শ’৩২ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক(ডিডি) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে জেলার পেঁয়াজ চাষীরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।