পাবনায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ‘গায়েব’, মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহ
পাবনায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ‘গায়েব’, মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহ
চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি এক রকম ‘গায়েব’। সর্বত্রে মানুষের মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহ।
পাবনায় প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এক সপ্তাহে বেড়েছে ১২০ জন। বিশেষ করে এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পাবনার সর্বত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে জনগণের মাঝে ব্যাপক উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। এতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নেই মাঠ পর্যায়ে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছেনা। হাট-বাজার,রাস্তা-ঘাট,গণপরিবহণসহ সবখানেই অনুপস্থিত স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ মানুষই আর মাস্ক পরছেনা।
জেলার সবকিছু খোলা,গণপরিবহণ থেকে শুরু করে সবখানে বেপরোয়াভাবে চলাচল। হাট-বাজারে একেবারেই বিধিনিষেধ উপেক্ষিত। মানুষের ভিড়ে ঠাসা বাজারগুলো। বাজারে কিংবা বাহনে বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক পরা যেন অনেকেই ভুলে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার উদাসীনতা সর্বত্র।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক হাট টেবুনিয়া, বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) শহরের পৌরসভা, বড়বাজার, ভূমি রেজিস্ট্রি অীফসসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কোন বালাই নেই। দোকানদার ও ক্রেতারা কোন মাস্ক পরছেনা। মাস্ক না পরলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে,কিন্তু হাট-বাজার,রাস্তা-ঘাটে কাউকে শাস্তির সম্মুখিন হতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন,সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। জনসচেতনতায় মাইকিং করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হবে।
এদিকে প্রথমে বাস’সহ সবধরণের গণপরিবহনে ভাড়া না বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা বলা হলেও পরে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের দাবির মুখে ‘যত আসন তত যাত্রী’ বহনের বিষয়টি মেনে নেয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। মালিক সমিতির নেতাদের দাবি মানা হলেও পাবনার বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির সেই নিয়ম মানা তো হচ্ছেই না; বরং অন্য সময়ের মতোই গাদাগাদি করেই চলাচল করছেন যাত্রীরা। তবে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি কোন যাত্রীর কাছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে পাবনা বাস টার্মিনাল, শহরের পুরোনো বাস স্ট্যান্ড, বাইপাস মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- বাসের সব আসন পূর্ণ থাকার পরও দাড়িয়ে যাত্রীরা যাচ্ছেন গন্তব্যে। আবার কোনও কোনও বাসে দরজায় ঝুলেও যাত্রীদের চলাচল করতে দেখা গেছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা যায়নি অধিকাংশ পরিবহনেই।
সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বরেণ,‘অনেকেরই প্রত্যাশা হলো, মহামারি করোনা থেকে তারা প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পরই সুরক্ষা পেতে চান। আর তাই মাস্ক পরা বা অন্য সাবধানতাগুলো মেনে চলেন না অনেকেই।কিন্তু সম্পূর্ণ সুরক্ষা পেতে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারি থেকে বাঁচতে ভ্যাক্সিন নিতেই হবে। তবে এখনো যেহেতু টিকার শতভাগ কার্যকারিতা নিয়ে কোথাও কোথাও দ্বিমত রয়েছে, তাই সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিয়মগুলো মানতেই হবে। করোনার প্রকোপ বেড়েই চলেছে, তাই নিয়ম কানুন মেনে চলার বিকল্প নেই। দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় সুতরাং যতটা পারা যায় মানুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকতে হবে। দূরত্ব না থাকলে যেকোনো জায়গায়ই ঝুঁকিপূর্ণ। দূরত্ব বজায় না থাকলেও যদি মাস্ক পরা থাকে, তবে কিছুটা প্রতিরোধ হয়। যেখানে বারবার হাত ধুতে পাবরেন না, সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।’ দু’ডোজ টিকা নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় বলে সিএস পুনর্ব্যক্ত করেন।