দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সুজানগরের সেই পোস্টমাস্টার ও পোস্টম্যান সাসপেন্ড

দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সুজানগরের সেই পোস্টমাস্টার ও পোস্টম্যান সাসপেন্ড

দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সুজানগরের সেই পোস্টমাস্টার ও পোস্টম্যান সাসপেন্ড

পাবনা প্রতিনিধি: দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সুজানগরের সেই পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) তাদেরকে সাসপেন্ড (সামরিক বরখাস্ত) করা হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে সাগরকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ভূক্তভোগী গ্রাহক শ্রী প্রদীপ কুমার কুন্ডুর স্ত্রী পুর্ণিমা রাণী কুন্ডু আমিনপুর থানায় এ মামলাটি করেন। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

লাপাত্তা ওই পোস্ট মাস্টারের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার দিঘী গোহাইলবাড়ী গ্রামে এবং পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের বাড়ী পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে।

পাবনা প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক আব্দুল মোত্তালেব,পরিদর্শক শাহীন জোবায়ের ও সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। তাই   পোস্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে  চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে শুক্রবার পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় রাজশাহী এর পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলামসহ বিভাগীয় কর্মকর্তরা সাগরকান্দি গিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সাথে কথা বলেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন।

পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রায় ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর প্রমাণ পাওয়া গেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তবে প্রতারণার শিকার হওয়া নতুন করে কোন নতুন গ্রাহক যুক্ত হলে এ টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে। পোস্ট অফিসের সাথে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ এর কোন ধরণের সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। বহিতে নগদের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায়  দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল। সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে তারা টাকা রাখতে গেলে পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাদের বলেন,‘নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি; এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেবার জন্য  পোস্ট অফিসের পাশাপাশি পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ (নগদ) নামে সরকার আরেকটি সংস্থা চালু করেছে। তাদের সেই কথা সত্যি ভেবে সরল বিশ্বাসে আমরা তাদের হাতে টাকা দিয়েছিলাম। এ সময় পোস্ট অফিস থেকে  পোস্ট অফিসের লোগো যুক্ত একটি টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য নগদ-এ মার্চেন্ট নামক একটি পাশ বহি প্রদান করা হয় আমাদের। তারা আরো জানান,পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ (নগদ) সংস্থায় টাকা রাখলে সরকার এক লাখে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে লাভ প্রদান করছে বলেও তাদেরকে জানানো হয়েছিল ওই সাব পোস্ট অফিস থেকে।

এদিকে প্রতারণার মাধ্যমে পোস্ট অফিস থেকে টাকা লাপাত্তার বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকদের মধ্যে টাকা হারানো ভয় ছড়িয়ে পড়ে এবং জেলার বিভিন্ন পোস্ট অফিসে গ্রাহকদের কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কিছুটা আস্বস্ত  ফিরে আসে।