ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ১১ বিভাগে নেই নারী শিক্ষক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ১১ বিভাগে নেই নারী শিক্ষক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ১১ বিভাগে নেই নারী শিক্ষক

প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরেও সকল বিভাগে নারী শিক্ষক নিশ্চিত করতে পারেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান থাকা ৩৪টি বিভাগের মধ্যে ১১টিতেই নেই কোন নারী শিক্ষক। শতভাগ পুরুষ শিক্ষক দিয়ে চলা এসব বিভাগের মোট শিক্ষক সংখ্যা ১১৪ জন। এ ছাড়া আরো নয়টি বিভাগে মাত্র একজন করে নারী শিক্ষক রয়েছেন, যেখানে পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন ৫৮ জন। ফলে বিভাগগুলোতে উলে­খযোগ্য সংখ্যক নারী শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষকরা সবাই পুরুষ হওয়ায় ব্যক্তিগত নানা সমস্যা তাঁদেরকে বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না বলে জানান ছাত্রীরা। এসব বিভাগের অধিকাংশতেই নারীরা শিক্ষক পদে আবেদন করলেও তাঁদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ফলে বিষয়টি লিঙ্গ বৈষম্য কী-না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক নারী শিক্ষক। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত¡ ও ইসলাম শিক্ষা অনুষদের তিনটি বিভাগে ৪৯ জন শিক্ষকের সবাই পুরুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষা-কার্যক্রম চলা এ বিভাগগুলোর শিক্ষকদের সবাই অধ্যাপক মানের। বিভাগগুলোতে প্রতিবছর নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও কোন নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, মার্কেটিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি ও চারুকলা বিভাগে কোন নারী শিক্ষক নেই। মোট ৬৫ জন পুরুষ শিক্ষক দিয়ে চলছে এই আট বিভাগের শিক্ষা-কার্যক্রম। এরমধ্যে কয়েকটি বিভাগের অফিস স্টাফরাও সবাই পুরুষ। ফলে শিক্ষাসফরসহ সবধরনের কার্যক্রমের জন্য পুরুষদের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। 

এদিকে, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড  ইঞ্জিনিয়ারিং ও আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে যথাক্রমে ২১, ১৮ ও আট জন শিক্ষক থাকলেও নারী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র এক জন করে। এই তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফোকলোর স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভ‚গোল, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগও। বাকী বিভাগগুলোর অধিকাংশতেই পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে। 

ছাত্রীরা জানান, নারী শিক্ষক না থাকায় বিভিন্ন সময়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ইভটিজিং, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার বিষয়েও পুরুষ শিক্ষকদের নিকট বলতে অস্বস্তির কথা জানান তাঁরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা থাকলেও সেটা হয়ে উঠছে না বলে দাবি তাঁদের।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদা টুম্পা বলেন, আমাদের মেয়েদের অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে যেগুলো আমরা পুরুষ শিক্ষকদের কাছে সরাসরি বলতে পারিনা। আমাদের শিক্ষক ও অফিস স্টাফদের সবাই পুরুষ এ জন্য শিক্ষাসফর বা অন্য কার্যক্রমগুলোতেও আমরা নারী শিক্ষক পাইনা। যে কারণে অনেক সময়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কয়েকজন নারী শিক্ষক থাকলে আমরা তাঁদের সাহচর্য পেয়ে উপকৃত হতাম এবং তাঁদের দেখে অনুপ্রেরণা পেতাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা এবং হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে নারী শিক্ষক না থাকা অবশ্যই নেতিবাচক দিক। এর ফলে বৈষম্য হচ্ছে। নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। সন্তানরা মায়ের কাছে যেভাবে সমস্যার কথা বলতে পারে সেটা বাবার কাছে হয় না। নারী ও পুরুষ উভয়ই শিক্ষক হওয়ার শর্ত প‚রণ করতে পারে। তাই তাঁদেরকেও নিয়োগ দেওয়া উচিৎ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে মেধা। সেখানে যদি কোন যোগ্য নারী পাওয়া যায় সে যেন বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করা উচিৎ। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু নারী-পুরুষ লিঙ্গবৈষম্যের প্রশ্নই আসে না। ৪৩ বছরের পুরোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিভাগে নারীদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব থাকবেনা এটা হয় না। আগামীতে আমরা বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবো।