ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার : কিছু পরামর্শ

ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার : কিছু পরামর্শ

ছবি: সংগৃহীত

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হয়। তবে রোজার সময় এক থেকে দেড় হাজার ক্যালরি খাবার গ্রহণ যথেষ্ট। কারণ রোজায় অল্প খাবার গ্রহণ করলেই অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর কোষগুলো পরিষ্কার হয়। তাই অন্যান্য সময় যে পরিমাণ খাবার খাওয়া যায়, রোজায় তার চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম খেতে হবে। এবার আসুন জেনে নিই, ইফতারে কী খাবেন আর কী পরিহার করবেন।
ইফতারিতে ৬০০ ক্যালরি পাওয়া যায় এমন সব খাবার খান।

১. খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম। খেজুরের মধ্যে শর্করা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, চারটি মাঝারি সাইজের (৩৫ গ্রাম) খেজুরের মধ্যে প্রায় ১০০ ক্যালরি রয়েছে। ইফতারে চার-পাঁচটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

২. ফলের মধ্যে ইফতারে কলা অন্যতম। একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি রয়েছে। একটি কলা রাখুন ইফতার মেন্যুতে।

৩. ছোলা-বুট খাওয়া যেতে পারে। ৫০ গ্রাম ছোলা-বুটে প্রায় ১৮০ ক্যালরি রয়েছে। ছোলা-বুট অল্প পরিমাণে খাবেন। ২০-২৫ গ্রামের চেয়ে বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ এটি পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

৪. একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে, একটি ডিম থেকে পাওয়া যায় ৮০ ক্যালরি।

৫. অন্যান্য ফল যেমন- তরমুজ, আপেল, কমলা এসব পানিশূন্যতা রোধে উপকারী।

৬. ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসি, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলোও রোধ করবে পানিশূন্যতা।
ইফতারে যা পরিহার করা উচিত

১. ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার তৈরি করা হয় যেমন- পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। কারণ এ খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে।

২. একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না।

৩. টকজাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, তারপরও টকজাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সাথে খেতে হবে। ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে। কারণ সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার এসিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই সতর্কতা অবলম্বন দরকার।

৪. টমেটো ইফতারের সময় অনেকের প্রিয় খাবার। তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এড থাকে যা পাকস্থলিতে ইরিটেশন তৈরি করে। তাই টমেটো বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।

৫. ঝাল খাবার পাকস্থলিতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচামরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।

৬. গরম খাবার যেমন- চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা ভালো।
রোজার মাসে যেহেতু আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও সময়ের পরিবর্তন আসে সেহেতু আমাদের উচিত স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া। আশা করা যায়, উপরের দেয়া পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে আপনাদের রোজার মাসেও সুস্থ থাকা সম্ভব।

ডা: ইসমাইল আজহারি

লেখক : পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ