মুক্তিপণ দাবি : অপহরণ চক্রের দু’সদস্য আটক, অপহৃতকে উদ্ধার

মুক্তিপণ দাবি : অপহরণ চক্রের দু’সদস্য আটক, অপহৃতকে উদ্ধার

মুক্তিপণ দাবি : অপহরণ চক্রের দু’সদস্য আটক, অপহৃতকে উদ্ধার

পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও অপহরণকারীদের দৌরাত্ম  বেড়ে গেছে। পথে-ঘাটে যখন তখন অপহরণকারীরা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। ছিনতাইকারীরা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা জবরদস্তি করে ছিনিয়ে সটকে পড়ছে।  এতে করে বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে উদ্বিঘ্নহয়ে পড়ছেন।  এমনি একটি অপহরণকারী চক্রের বেড়াজাল থেকে এক অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ঔ চক্রের দু’সদস্যকে।

দির্ঘদিনের পেশাদার মুক্তিপণ আদায়কারী সেই শাহেদ আলী অবশেষে পুলিশের জালে আটকা। উদ্ধার করা হয়েছে অপহরণকারীদের বন্দীদশা থেকে অপহৃত শাহানুর আলীকে।

অপহৃত শাহানুর আলী নামে শ্রমিককে চাটমোহর উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত বিকাশ এজেন্টসহ দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। রোববার (২৪ এপ্রিল) উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সাহাপুর দিয়ারপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

অপহৃত শ্রমিক শাহানুর সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের রায়শিমুল গ্রামের বাবু খাঁর ছেলে।

আটককৃতরা হলেন- চাটমোহর উপজেলার সাহাপুর দিয়ারপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে শাহেদ আলী (৬৫) ও বালুদিয়ার গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে বিকাশ এজেন্ট আবুল হাশেম (৩৫)।

চাটমোহর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, শ্রমিক শাহানুর কাজের সন্ধানে শনিবার (২৩ এপ্রিল) পাবনা শহরে যান। রাত ৮টার দিকে শহরের আতাইকুলা রোড এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করে একটি চক্র। শাহানুর বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে পরিবারের কাছে মুঠোফোনে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

শাহানুরের স্বজনরা বিকাশের মাধ্যমে একটি নম্বরে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পাঠান এবং পাবনা সদর থানায় এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ করেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পাবনা সদর থানা পুলিশ নিশ্চিত হয় শাহানুরকে দিয়ারপাড়া গ্রামে আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ভোরে শাহেদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শাহানুরকে উদ্ধার করে এবং শাহেদকে আটক করে। পরে বিকাশ এজেন্ট আবুল হাশেমকেও আটক করা হয়।

পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন,‘আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি এই চক্রটি বিভিন্ন মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে তাদেরকে হত্যা করে। অপহৃত শ্রমিককে উদ্ধারের পর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

উল্লেখ্য, চাটমোহরের একটি চক্র অনেকদিন ধরে সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ওঁৎ পেতে থেকে মাইক্রোবাস ব্যবহার করে কখনো অপহরণ আবার কখনো দলবেধে দাঁড়িয়ে থেকে ফ্লিমি স্টাইলে ছিনতাই করছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিসম্প্রতি আতাইকুলা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন যাওয়ার পথে এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর নিকট থেকে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এর কয়েকদিন পর খোদ সুজানগর শহরের মধ্যে জনৈক এক কাপড় ব্যবসায়ীকে গুরুতরভাবে আঘাত করে ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাস যোগে দ্রুত সটকে পড়ে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া সেই ব্যক্তি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এসব ঘটনায় বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা আতংকিত। সাধারণ সময়ের চেয়ে ঈদকে সামনে নিয়ে এসব চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বেশি বলে জানা গেছে।

পাবনা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান,‘ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এব অপকর্মের সাথে জড়িতদের পাকড়া করা হচ্ছে। জনগণের কাছ থেকে সঠিকভাবে ইনফরমেশন পেলে তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ করি না।’