‘অগ্নিপথ’ নিয়ে কেন আগুন জ্বলছে ভারতে

‘অগ্নিপথ’ নিয়ে কেন আগুন জ্বলছে ভারতে

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের ভারতীয় পার্লামেন্ট তথা লোকসভা ভোটের আগে বছরে দু'কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত আড়াই বছরে তা কার্যত শূন্যে এসে ঠেকেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, করোনা মহামারী পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে যে আর বেশি দিন চলবে না, তা অনুভব করেই মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী দেড় বছরে ১০ লাখ ‘সরকারি চাকরি’র ঘোষণা করেছিলেন। আর তারই মধ্যে ছিল ৪৫ হাজার চুক্তিভিত্তিক সামরিক বাহিনীতে নিয়োগে 'অগ্নিপথ' প্রকল্প। যাকে ঘিরে সহিংসতার আগুন ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সাতটি রাজ্যে।

ভারতের সরকারি ক্ষেত্রে রেল ছাড়া যুবকদের চাকরির বড় ভরসা হলো সামরিক বাহিনী। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা সামরিক বাহিনীর চাকরিকে বেছে নেন। কিন্তু অগ্নিপথ প্রকল্পে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (স্থল, নৌ এবং বিমান) নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিবীর’দের ৭৫ শতাং‌শকেই চাকরি পাওয়ার চার বছরের মধ্যে অবসর নিতে হবে। এককালীন কিছু টাকা মিললেও থাকবে না পেনশনের ব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে তাদের আবার নতুন করে চাকরির সন্ধান করতে হবে। ফলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে অভিযোগ।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলেও কেন বাকি ৭৫ শতাংশকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে না, আন্দোলনকারী সে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে পুলিশ ও অন্য পরিষেবাগুলোতে অগ্নিবীরদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো কয়েকটি রাজ্য। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতৈ নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু অগ্নিবীরেরা সাবেক সেনাকর্মীদের সমান সুযোগ পাবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

অবসরের সময় ‘সেবা নিধি’ প্রকল্পে ১১ থেকে ১২ লাখ রুপি মিলবে ‘অগ্নিবীর’দের। কিন্তু স্থায়ী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমান ঝুঁকি কাজ করেও কেন পেনশন বা গ্র্যাচুইটির সুবিধা মিলবে না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তা ছাড়া, মহামারী পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীতে স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই হঠাৎ চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগের ঘোষণা কেন তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

অগ্নিবীরদের নিয়োগের সময় বয়স হতে হবে সাড়ে ১৭-২৩ বছর। আগে সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর তা বাড়িয়ে ২৩ করা হয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে সাধারণভাবে অফিসার এবং জওয়ান নিয়োগের বয়স ১৮-২৫ বছর। নতুন বয়ঃসীমায় অনেক যুবকই কাজের সুযোগ হারাতে চলেছেন বলে আপত্তি তুলেছেন অনেকে। তা ছাড়াও, করোনা আবহে দু’বছর সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ বন্ধ থাকায় চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বেড়েছে। ফলে অনেকেরই আর সামরিক বাহিনীর সদস্য হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে না।

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেকারত্ব বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্ব নিয়ে আশঙ্কা আর ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। নানা ভাবে তা চাপা ছিল। সেই চাপা রাগই, রোষ হয়ে আছড়ে পড়ছে গত কয়েক দিনে। অনুঘটকের কাজ করেছে অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো যে রাজ্যগুলো থেকে সেনাবাহিনীতে বেশি সংখ্যায় যুবক চাকরি করতে যান, বিক্ষোভ বেশি সেখানেই। অগ্নিপথকে বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ বলে তারা মানছেন না। উল্টা চাকরির নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা কমানো হচ্ছে বলেই অভিযোগ করছেন বিক্ষোভকারীরা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা