বন্যার্তদের সেবায় ইসলামের নির্দেশনা

বন্যার্তদের সেবায় ইসলামের নির্দেশনা

বন্যার্তদের সেবায় ইসলামের নির্দেশনা

 

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো তথা যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীবাসীর প্রতি সতর্কবার্তা নিয়ে আসে। আল্লাহতায়ালা এসবের মাধ্যমে জগৎবাসীকে পরীক্ষা করে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত মানুষদের প্রতি সচ্ছল নিরাপদ মানুষদের কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়া প্রতিটি বিবেকবান মানুষের অবশ্য কর্তব্য। ইসলামে রয়েছে এ ক্ষেত্রে অসাধারণ কার্যকরী দিকনির্দেশনা।

আর্তমানবতার সেবায় ইসলামের ভূমিকা সর্বাগ্রে। বিপদগ্রস্তের সাহায্য ও অসহায়ের সহযোগিতা করা ইসলামের মহৎ ও মৌলিক শিক্ষা।প্রিয় নবী সা:কে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির করুণাস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭)

বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। এ সময় বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা বড় অসহায় হয়ে পড়েন। এ জাতীয় অসহায় বন্যার্তদের সেবায় সামর্থ্যবান প্রতিটি ব্যক্তির এগিয়ে আসা উচিত। বর্তমানে সিলেটে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

তুলনামূলক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা সর্বোচ্চ প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ। প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা-২৬১)

দরিদ্রক্লিষ্ট বনি আদম ও অসহায় নারীদের সাহায্য করতে প্রিয় নবী সা: অনেক বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ তিনি আরো বলেন এবং সে ওই নামাজ আদায়কারীর মতো যার ক্লান্তি নেই এবং ওই রোজা পালনকারীর মতো, যার রোজায় বিরাম নেই।’ (বুখারি-৬০০৭)

অসহায়, পীড়িত, ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ও বিপদাক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতা করলে আল্লøাহ উভয় জগতে প্রতিদান দেবেন। আবু সাইদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনের ক্ষুধা নিবারণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনের তৃষ্ণা দূর করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন মোহরাঙ্কৃত জান্নাতি সুধা থেকে পান করাবেন। যে মুমিন কোনো মুমিনকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উন্নতমানের সবুজ কাপড় পরাবেন। (তিরমিজি-২৩৮৬)

মানবসেবা, দুস্থদের সাহায্য ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। ‘কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রƒষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আমি আপনার শুশ্রƒষা করব? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রƒষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে? ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে।’ (মুসলিম-৬৭২১)

গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি যে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আসুন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহাযার্থ্যে কিছু উদ্যোগে শামিল হই। ইসলামের মর্মবাণী অনুসারে মানুষের সাহায্যে পাশে দাঁড়াই। যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করে আক্রান্তদের কষ্ট লাঘব করি। বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর