সাকিবের একার লড়াইয়ের ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ

সাকিবের একার লড়াইয়ের ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে একা লড়াই করেও বাংলাদেশকে জেতাতে পারলেন না অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।  দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ৩৫ রানে হারে টাইগাররা। বল হাতে ১ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে অপরাজিত ৬৮ রান করেন সাকিব। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বৃষ্টির কারনে ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি পরিত্যক্ত হয়েছিলো। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সূর্যের হাসি ছিলো শুরু থেকেই। তাই টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একাদশে দু’টি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে  বাংলাদেশ। মুনিম শাহরিয়ার ও নাসুম আহমেদের জায়গায় তাসকিন ও মোসাদ্দেক হোসেন সুযোগ পান। 

ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ পেসার তাসকিনের করা প্রথম ওভারেই ১৪ রান তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কাইল মায়ার্স ও ব্রান্ডন কিং। যেখানে মায়ার্স ১টি করে চার-ছক্কা মারেন। 

বাউন্ডারি দিয়ে দ্বিতীয় ওভার শুরু করেছিলেন মায়ার্স। তবে ঐ ওভারে স্পিনার মাহেদি হাসানের পঞ্চম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মায়ার্স। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১৭ রান করেন টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় মায়ার্স। 
ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটার শামারাহ ব্রুকসকে রানের খাতাই খুলতে দেননি সাকিব। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়ে যান সাকিব। ছক্কা মারার আসায় শর্ট মিড-উইকেটে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ক্যাচ দেন ব্রুকস। 

২৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর কিছুটা চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সেই চাপকে আমলে নেননি কিং ও অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। পঞ্চম ওভারে জুটি বাঁধার পর ১১তম ওভার পর্যন্ত, প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করে নেন কিং ও পুরান। ফলে ১১ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৯৪ রানে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

সাকিবের করা ইনিংসের ১২তম ওভারে নিষ্প্রভ ছিলেন কিং-পুরান। ঐ ওভারেই বলকে সীমানা পার করতে পারেননি তারা। তবে ঐ ওভারেই ১শতে পৌঁছায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে ক্যারিবীয় অধিনায়ক পুরানকে বিদায় দেন মোসাদ্দেক। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন পুরান। রিভিউ নিলে, সেটি কাজে লাগেনি পুরানের। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৩৪ রান করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক পুরান। তৃতীয় উইকেটে কিংয়ের সাথে ৫৬ বলে ৭৪ রান যোগ করেন পুরান। নিজের প্রথম ওভারটি উইকেট মেডেন ছিলো মোসাদ্দেকের। 

পুরানের আউটে ১৩তম ওভারে উইকেটে আসেন সহ-অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। ১৪তম ওভারে সাকিবের ডেলিভারি বাউন্ডারি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন কিং। ৩৬ বলে অর্ধশতক পুরন করেন  তিনি। 
নিজের প্রথম ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিলো তার। ১৬তম ওভারে শেষবারের মত আক্রমনে আসেন তিনি। সাকিবের প্রথম চার ডেলিভারি থেকে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন পাওয়েল। ঐ ওভার থেকে ২৩ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিবের ৪ ওভার থেকে ৩৮ রান পায় স্বাগতিকরা। 

সাকিবের উপর চড়াও হয়েই দমে যাননি পাওয়েল। ১৭তম ওভারের প্রথম দুই ছক্কা মারেন তিনি। বোলার ছিলেন তাসকিন। বাউন্ডারি দিয়ে ওভার শেষ করেন পাওয়েল।
এক প্রান্ত আগলে, রানের চাকা ঘুড়ানো কিংকে ১৮তম ওভারে বিদায় দেন শরিফুল। আউট হওয়ার আগে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৫৭ রান করেন কিং। কিং-পাওয়েল চতুর্থ উইকেটে ২৮ বলে ৬৩ রান যোগ করেছিলেন। ঐ ওভারেই নিজের মুখোমুখি হওয়া ২০তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন পাওয়েল। 

শরিফুলের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ১৭ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় বলে ওডেন স্মিথ ও শেষ বলে পাওয়েল ছক্কা মারেন। ফলে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ক্যারিবীয়দের। বল হাতে বাংলাদেশের শরিফুল ৪০ রানে ২টি উইকেট নেন। মাহেদি-সাকিব ও মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট নেন। 

জয়ের ১৯৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ওবেড ম্যাককয়ের মিডল স্টাম্পে থাকা বলটি আলতো ছোঁয়ায় ফ্লিক করেন লিটন(৫)। মারে মোটেও জোর ছিলো না। ফলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন ব্রুকস। 
পরের ডেলিভারিতেই অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এডজ হয়ে বোল্ড হন এনামুল হক বিজয়(৩)। 
শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারানোর পর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সাকিব ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তৃতীয় ওভারে স্মিথকে পরপর দুই বলে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারেন মাহমুদুল্লাহ। তবে ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে খেলে মিড-অফে ক্যাচ দেন ১১ রান করা  টাইগার নেতা। 

২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন বিপদে বাংলাদেশ, তখন কাউন্টার অ্যাটাক করার চেষ্টা করেন সাকিব ও পাঁচ নম্বরে নামা আফিফ হোসেন। চতুর্থ থেকে নবম ওভার পর্যন্ত ৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তারা। এরমধ্যে আফিফ ৩টি চার ও ১টি ছক্কা এবং সাকিব ৩টি চার মারেন। এতে ৯ ওভার শেষে ৭২ রান উঠে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে। 

১১তম ওভারে সাকিব-আফিফ জুটি ভাঙ্গেন শেফার্ড। শেফার্ডের বলটি ফাইন লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আফিফ। ২৭ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি। সাকিবের সাথে ৪৪ বলে ৫৫ রানের জুটি  গড়েন আফিফ। 
এরপর উইকেটে গিয়ে সেট হতে গিয়ে ১৩ বল খেলেন নুরুল। রান তুলেন মাত্র ৭। ফলে ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের আস্কিং রেট গিয়ে পৌঁছায় ১৯এ। ঐ অবস্থায় ওয়ানডে মেজাজে ছিলেন সাকিব। ৩৩ বলে ৩২ রান করেছিলেন তিনি। ৪৫ বলে ৯৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দশম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাকিব। 

হাফ-সেঞ্চুরির পর জীবন পেয়ে রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন সাকিব। নিজের মুখোমুখি হওয়া পরের ৭ বলে ১৮ রান নেন তিনি। তাতে হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। হারের ব্যবধানই শুধুমাত্র কমেছে। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ বলে অপরাজিত ৬৮ রান করেন সাকিব। সাকিবের সাথে তাল মিলিয়ে কোন ব্যাটার ইনিংস শেষ পর্যন্ত না খেলাতেই হার বরণ করে নিতে হয় বাংলাদেশকে। 

৬৮ রানের ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রান করেন সাকিব। এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ১২০ উইকেটের মালিক সাকিব। তাই ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ২ হাজার রান এবং ১শ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন সাকিব। 

সাত নম্বরে নামা মোসাদ্দেক ১১ বলে ১৫ ও আট নম্বরে নামা মাহেদি ২ বলে ৫ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাককয় ও শেফার্ড ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাওয়েল। 
আগামী ৭ জুলাই গায়ানার প্রোভিডেন্স পার্কে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।

সূত্র: বাসস