পাবনায় বিদ্যুতের শিডিউল বিপর্যয়ে লোডশেডিংয়ের সঙ্গে ভ্যাপসা গরম, জনজীবন অতিষ্ঠ

পাবনায় বিদ্যুতের শিডিউল বিপর্যয়ে লোডশেডিংয়ের সঙ্গে ভ্যাপসা গরম, জনজীবন অতিষ্ঠ

ছবি- নিউজজোন বিডি

পাবনা প্রতিনিধি:বিদ্যুতের শিডিউল বিপর্যয়ে রয়েছে পাবনা। পাঁচ-ছয়বার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পাবনার গ্রাহকরা। এক ঘণ্টার স্থলে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। গ্রাহকদের অভিযোগ, মানা হচ্ছে না শিডিউল, লোডশেডিংয়ের সময়সূচি জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার অর্ধেক, কখনো তারও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের তথ্যও আগাম জানানো সম্ভব হচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে মানুষকে অর্ধেক রাত নির্ভর করতে হয় হাতপাখার ওপর। সন্ধ্যার পর পুরো শহরে ভুতুড়ে অন্ধকার নেমে আসে। বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ক্ষতি হচ্ছে। লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। মাঠে সেচ ব্যবস্থায় চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।

ঈাবনার সব ফিডারেই দিন-রাতে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দিনে (পিক সময়েও) ৪৮ মেগাওয়াটের স্থলে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে অর্ধেক মেগাওয়াট এবং রাতে তার চেয়ে একটু বেশি।

লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাটারিচালিত ফ্যান ও চার্জার লাইটের দোকানে। নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন জেলার ইলেকট্রিক দোকানগুলোতে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা পড়েছেন বিপাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ করতে না পাড়ায় দৈনন্দিন আয় নিয়ে বিপাকে আছেন অনেকে।

মুদি দোকানে মোমবাতির ব্যবসা বেড়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে রোপা আমন মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা।

পাবনা সদরের গাছপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহীম বলেন, ‘প্রচুর গরম আমাদের এখানে। বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। ছোট বাচ্চারা ঘুমাতে পারছে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।’

চাটমোহর উপজেলা শহরের থানা পাড়া এলাকার মাজেদুল হক বলেন, ‘আমাদের শহরে গড়ে ৪-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। যে পরিমাণে গরম পড়ছে বিদ্যুৎ ছাড়া ২ মিনিটও থাকা যায় না। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসা করতেও সমস্যা হচ্ছে।

পাবনা বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নর্থ বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ( নেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি) এই দুই কোম্পানির মাধ্যমে পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে অর্ধেকেরও কম।

শুক্রবার (২২ জুলাই) দুই কোম্পানির আওতায় মোট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ২৬ মেগাওয়াট। এজন্য ১-২ ঘণ্টার পরিবর্তে দিনে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।

শহরের খেয়াঘাটপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, এলাকাভিত্তিক এক থেকে দুই ঘণ্টার কথা বলা হলেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং চলছে। গত কয়েকদিনে দেখা গেছে দিনে ৫-৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে।

গোবিন্দা মহল্লার এক পরীক্ষার্থী বলেন, তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরে থাকা যায় না। ঠিকমতো  লেখাপড়া করতে পারছি না। অথচ সামনেই আমাদের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে পাবনা বিদ্যুৎ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাজেদুল হক বলেন, সারাদেশের মতো আমরাও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলায় বর্তমানে দিনে শুধুমাত্র পিডিবির চাহিদা ৪৮ মেগাওয়াট (আরইবি বাদে) বিদ্যুৎ। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে অর্ধেক বা তার চেয়ে একটু  বেশি, তাই ১-২ ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের নির্দেশনা মানা যাচ্ছে না।

তবে জেলা শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলাসহ গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। এসব এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে  লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়ায় এলাকা নির্ধারণ করে ক্রমান্বয়ে  লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।