মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর জন্য কী বার্তা দিচ্ছে বিসিবি

মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর জন্য কী বার্তা দিচ্ছে বিসিবি

মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর জন্য কী বার্তা দিচ্ছে বিসিবি

‘বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা ভালো খেলছে না, এখন বোর্ড নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে’- সোমবার বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সাথে অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠক শেষে এমন কথাই বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের দল ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে একটা প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছিল- মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি টি-টোয়েন্টি দল থেকে চিরতরে বিদায় বলে দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড?এমন প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট কোনো উত্তর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বশীল কারো মুখ থেকেই আসেনি।

কিন্তু খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটটা গুরুত্বপূর্ণ, কোনো ব্যক্তি, কোনো নাম আর গুরুত্বপূর্ণ নয় বিসিবির কাছে। তাই এখন অন্য কিছু করার এই চেষ্টা।"মুশফিকুর রহিম টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের নিয়মিত মুখ, ওয়ানডে ফরম্যাটেও তিনি এখনো দল থেকে বাদ পড়েননি।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটাই প্রথম নয়, ২০২১ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে মুশফিককে ছাড়াই দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

সেইবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছিলেন, মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে।তবে মুশফিকুর রহিম এই 'বিশ্রামের' খবর পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখন।মুশফিকের ভাষ্য ছিল বাদ দেয়া হলে 'বাদ' বলাই ভালো, বিশ্রাম নয়।

তবে এবার বোর্ড বিশ্রাম বললেও মুশফিকুর রহিম নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ‘এই দলটাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। সোহানকে অধিনায়ক হিসেবে শুভকামনা।’

বোর্ডের সাথে যে মুশফিকের সাম্প্রতিক সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না, তা স্পষ্ট হয়েছিল টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক হাঁকানোর দিনে বাংলাদেশী এই ক্রিকেটারের 'বিদায়' ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তার স্ত্রী জান্নাতুল মন্ডি নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মুশফিকুরকে অভিনন্দন জানিয়ে দুটি ছবি পোস্ট করেন যেখানে তিনি লেখেন, ‘আমরা হাসিমুখেই বিদায় নিবো ইনশাআল্লাহ।’

‘তবে আপনাদের রিপ্লেসমেন্ট আছে তো?? সেদিকেও একটু নজর দিলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন হতো।’সরাসরিই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি ইঙ্গিত করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত আর খোলাসা করেননি কেউই।খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ক্রিকেটারদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেছেন, ‘রিয়াদ মুশফিক সাকিব তামিম এরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছে। আবার একই সাথে এটাও মানতে হবে। তারা সারাজীবন ক্রিকেট খেলবেন না।’সুজনের কথায় স্পষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের মূল উদ্দেশ্যটা এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, 'টি-টোয়েন্টির মতোই খেলা'।

এর আগে ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন, সম্প্রতি তামিম ইকবাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিদায় নেন।এখনো বিদায় নেননি তবে বিসিবি 'বিশ্রাম দিয়েছে' মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বহুল আলোচিত টার্ম 'পঞ্চপাণ্ডবের' মধ্যে তিন ফরম্যাটেই আছেন এখন শুধুই সাকিব আল হাসান। তিনিও এই জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অধীনে বাংলাদেশ শেষ ১১টি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে।ব্যাট হাতেও গত দশ ম্যাচে মাত্র দুইবার ২০ রান পার করেছেন, সর্বোচ্চ করেছেন ২২ রান।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একটা অংশ আজই পৌঁছাবে জিম্বাবুয়েতে যেখানে টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল ও ফিজিও মুজাদ্দেদ সানির সাথে আছেন মুনিম শাহরিয়ার, হাসান মাহমুদরা, যারা কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অংশ ছিলেন না।মুনিম শাহরিয়ারের ওপর এখনো পর্যন্ত ভরসা রাখা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের টানা তিন সিরিজে, হাসান মাহমুদ ইনজুরি দুই বছর চার মাস পর জাতীয় দলের হয়ে সফর করছেন।

এই দলের আরো ক্রিকেটারদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ, বলা যায় যারা এই দলের সিনিয়র ক্রিকেটার তারা এখনো ৩০ বছর অতিক্রম করেননি অনেকেই।মুস্তাফিজুর রহমান ও লিটন দাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বেশি।তবে আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় এই দল থেকে বাদ পড়েছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

এই দু’জনের জন্য টি-টোয়েন্টি দলের দরজা অনেকটাই বন্ধ এখন, কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিৎ বিষয়টা পরিস্কার করা।

নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এটাতে বোর্ড একটা রহস্য রেখে দিলো কেন আমি জানি না। যদি ব্যাপারটা এমন হয় যে এটা বিশ্রাম অথবা একেবারে ওদের নিয়ে ভাবছে না। সামনে যাই হোক নতুনদের নিয়েই এগিয়ে যাবো।’

মুশফিক বা রিয়াদ যদি অনিশ্চয়তা নিয়ে টি-টোয়েন্টি না খেলে, এই ঘটনাগুলো অন্য ফরম্যাটে প্রভাব ফেলবে, একটা আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন নাজমুল আবেদীন।তবে জিম্বাবুয়ে তুলনামূলক দুর্বল দল হওয়াতে এটাকে অবশ্যই একটা সুযোগ বলে মনে করেন তিনি।তাই এই সফরে বাংলাদেশ তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়ার কাজকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা কালচার আছে, সিনিয়ররাই মূল কাজটা করবে। এই ভাবনাটায় পরিবর্তন আসতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তরুণ ক্রিকেটাররা সুযোগ পাবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে সামনে এগোনো যাবে।’তবে এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটা 'ব্যারিয়ার' ব্রেক করেছে এটুকু নিশ্চিত বলেই মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

সূত্র : বিবিসি