যেসব প্রশ্নের উত্তর হতে পারেন ‘সৈকত’

যেসব প্রশ্নের উত্তর হতে পারেন ‘সৈকত’

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরের শুরুতেই নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণার পরেই ক্রিকেট সমর্থকরা অবাক হয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন না, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা।

এবারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আরো একবার চমক দিলো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে, যেখানে লিটন দাসের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন স্কোয়াডে একই সাথে চোট পাওয়া নুরুল হাসান সোহানের জায়গায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকেও দলে নেয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক গেম ডেভেলপমেন্ট ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, সৈকতের জন্য এই সময়গুলো একটা বড় সুযোগ, কারণ ও পারফর্ম করছে। একই সাথে সবার নজর আছে।

তুলনামূলক তরুণ স্কোয়াড পাঠানোর কারণে ক্রিকেট অনুসারীরা এবং বোদ্ধারা এই সিরিজে রাখছেন বাড়তি নজর।

তরুণ ক্রিকেটার বলা হলেও এই স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আশেপাশেই আছেন।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও তাদেরই একজন, যারা প্রায় ছয়-সাত বছর ধরে জাতীয় দলের আশেপাশে আছেন।

২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে সিরিজে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার খেলতে নামেন।

এখনো সৈকত দলের অংশ হয়ে উঠতে পারেননি ঠিক। কিন্তু তিনি দলকে বাড়তি শক্তি দেবেন বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ব্যাটিংয়ে সৈকত হতে পারেন ভিত
নাজমুল আবেদীন ফাহিম মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে 'সলিড ব্যাটসম্যান' মনে করেন।

এখানে তিনি দুটি দিকই দেখছেন, এক হচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যদি অলরাউন্ডার বিবেচনায় দলে সুযোগ পান সেক্ষেত্রে তাকে সাকিবের মতো নামের সাথে টেক্কা দিতে হবে, বাস্তবতা বিবেচনায় এটা কঠিন হবে সৈকতের জন্য।

আরেকটি দিক হলো, বাংলাদেশে এখন যারা অলরাউন্ডার হিসেবে দলে সুযোগ পাচ্ছেন তাদের চেয়ে সৈকত পরিণত ব্যাটসম্যান, এতে দলের ব্যাটিং শক্তি বাড়বে একই সাথে সৈকতও একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন দলে।

এক্ষেত্রে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের দিকেই নজর দিয়েছেন নাজমুল আবেদীন।

‘আবাহনীকে দুই একটা মৌসুমে সৈকত একাই টেনেছে। এটা প্রমাণ করে সৈকত পারফর্মার, চাপেও সে ভালো খেলতে পারে।’

লিস্ট এ ক্রিকেটে সৈকতের ব্যাটিং গড় ৪০ এর বেশি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৪.২৬।

বোলিং বিভাগেই সৈকত মূলত এবারে আলোচনায় এসেছেন।

বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চারজন বোলার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন, তাদেরই একজন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রায় একাই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছেন।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলে ভূমিকা যাই থাকুক না কেন তিনি নিজেকে 'পার্ট-টাইম' বোলার মনে করেন না।

পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ডট বল করা। ভালো জায়গায় বল করেছি, তাই ফল পেয়েছি।’

ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, বোলার হিসেবে সৈকত জাতীয় দলে ভূমিকা রাখলে সেটা হবে দলের জন্য বোনাস।

বাংলাদেশের হয়ে এর আগেও তিনি বল হাতে ভূমিকা রাখেন, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন সৈকত। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে সৈকত খুব একটা বল হাতে নেননি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, এতে করে তার মানসিক দৃঢ়তাও তৈরি হয়েছে, সৈকতের এখন সময় পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা, বলছেন বিশ্লেষকরা।

তবে নাজমুল আবেদীন ফাহিম মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে চান, বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে নির্বাচকরা বা টিম ম্যানেজমেন্ট অনেক সময়ই অলরাউন্ডার পেলে, যারা অল্প ব্যাটিং সাথে কার্যকরী বোলিংটা পারেন সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বা বোলারকে স্যাক্রিফাইস করেন। এটা সেই ক্রিকেটারের দিকে ভুল বার্তা দেয়।

তাই সৈকতকে দলে পোক্ত করার আগে তার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার দিকে নজর দেয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এই মেন্টর।

সূত্র : বিবিসি