যুক্তরাজ্যের পথে শেখ হাসিনা, আরও যারা থাকছেন রানির শেষকৃত্যে

যুক্তরাজ্যের পথে শেখ হাসিনা, আরও যারা থাকছেন  রানির শেষকৃত্যে

যুক্তরাজ্যের পথে শেখ হাসিনা, আরও যারা থাকছেন রানির শেষকৃত্যে

রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

১৯শে সেপ্টেম্বর রানির শেষকৃত্যে অংশ নিয়ে তিনি সেখান থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাবেন।

রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যে রাজপরিবার এবং রাজনীতিবিদদের অন্যতম বড় একটি সমাবেশ হতে যাচ্ছে।সপ্তাহান্তের ছুটিতে শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ৫'শর মত রাষ্ট্র প্রধান এবং বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।বেশিরভাগ বিশ্ব নেতাদের বলা হয়েছে তারা যেন বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে আসেন।

তাদেরকে পশ্চিম লন্ডনের একটি স্থান থেকে বাসে করে নেয়া হবে।শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে দুই হাজার দুইশ মানুষের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।এই অনুষ্ঠানে কারা থাকবেন এসম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে।

ইউরোপের রাজপরিবার

ইউরোপের যত রাজপরিবার আছে তারা সবাই আমন্ত্রিত, এদের অনেকেই আবার রানির সঙ্গে রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়।বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং রানি ম্যাথিলডে নিশ্চিত করেছেন তারা সেখানে যাবেন।

নেদারল্যান্ডের রাজা উইলেম অ্যালেক্সান্ডার এবং তার স্ত্রী রানি ম্যাক্সিমা এবং রাজার মা, সাবেক রানি প্রিন্সেস বিয়াট্রিক্স আসবেন।স্পেনের রাজা ফেলিপে এবং রানি লেটিজিয়া আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন, একই ভাবে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং মোনাকোর রাজপরিবারের আসার কথা রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

হোয়াইট হাউস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।যদিও এটা বোঝা যাচ্ছে যে লন্ডনে যাওয়ার পর তারা বাসে ভ্রমণ করবেন না।

এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও সফরে আমন্ত্রণ জানাবেন কিনা, এনিয়ে একটি আলোচনা ছিল।কিন্তু প্রতিনিধিদলের সীমিত আকার দেখে বোঝা যাচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।

তবে এমন একটা জল্পনা চলছে যে কয়েকজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ পেতে পারেন -বিশেষ করে ওবামা পরিবার।মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানাচ্ছে জিমি কার্টার যিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি আমন্ত্রণ পাননি।

কমনওয়েলথের নেতারা

কমনওয়েলথের নেতারা এই অনুষ্ঠানে আসবেন বলে আসা করা হচ্ছে।রানি তাঁর সময়কালে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রধান হিসেবে ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।বেশ কয়েকজন গভর্নর জেনারেল যারা রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন কমনওয়েলথ দেশে ছিলেন, তারা তাদের দেশের নেতাদের সঙ্গে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল উইক্রমাসিংহে আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

অন্যান্য বিশ্ব নেতারা

অন্যান্য বিশ্ব নেতা যারা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন আয়ারল্যান্ডের টিশাখ (সরকারপ্রধান) মাইকেল মার্টিন, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমেয়ার, ইটালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাট্টারেল্লা এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন।দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল এবং ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোও নিশ্চিত করেছেন যে তারা যাবেন।জাপানের সম্রাট নারুহিতো, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এরদোয়ান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্র যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এখনো জানা যায়নি যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, যিনি কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এই প্রথমবারের মত এই সপ্তাহেই বিদেশে- কাজাখিস্তান এবং উজবেকিস্তান সফর করবেন, তিনি আমন্ত্রণপত্র পাবেন কিনা অথবা পেলেও সেটা গ্রহণ করবেন কিনা।হোয়াইটহল সূত্র থেকে বলছে ইরানের নিউক্লিয়ার কর্মসূচীর কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের কেউ প্রতিনিধিত্ব করবেন।

যারা আমন্ত্রিত নন

যুক্তরাজ্য সরকারের সূত্র বিবিসির জেমস লানডেলকে বলেছেন সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। এর কারণ এই দেশগুলোর সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে।উত্তর কোরিয়া এবং নিকারাগুয়াকে যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাতে শুধুমাত্র রাষ্ট্রদূতকে তারা পাঠাতে পারবেন।এদিকে রাশিয়া, বেলারুশ এবং মিয়ানমারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে যেয়ে ঠেকেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টে ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন তিনি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়টা "বিবেচনা করছেন না"।ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কিছু অংশ শুরু করা হয়েছিল বেলারুশ থেকে।অপরদিকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী মিয়ানমার ক্ষমতা দখল করে নিলে যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ খানিকটা কমিয়ে দেয়।

সূত্র :  বিবিসি