রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ!

রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ!

মোহাম্মদ বিন সালমান

অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, উবার, পেপ্যালসহ বিশ্বের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব৷ তারা কি ভবিষ্যতে এই বিনিয়োগ রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে ব্যবহার করবে?

২০১৫ সালে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭১ সালে চালু হওয়া দেশটির ‘পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড' পিআইএফ ব্যবহার করে দেশকে আধুনিকতর করা এবং আয়ের উৎস বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন এমবিএস৷ তারই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে উবার-এ সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে বিশ্বে প্রথম আলোড়ন তুলেছিলেন এমবিএস৷

২০৩০ সালের মধ্যে পিআইএফকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ' সভরেন ওয়েলথ ফান্ড বা ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল' হতে চায়৷ বিশ্বের অনেক দেশেরই এমন তহবিল আছে৷ এসব তহবিল রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট হয়ে থাকে৷ বর্তমানে নরওয়ের তহবিল সবচেয়ে বড়, যার পরিমাণ ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার৷

২০৩০ সালের মধ্যে পিআইএফ-এর সম্পদের পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চান মোহাম্মেদ বিন সালমান৷ বর্তমানে এর সম্পদের পরিমাণ ৬০৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি৷

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেল রফতানি করে সৌদি আরবের আয় বাড়ছে৷ ফলে পিআইএফ-এর আকার আরো বড় হবে বলেই মনে হচ্ছে৷

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন গ্লোবাল এনার্জি পলিসির সিনিয়র গবেষক কারেন ইয়ং বলছেন, বর্তমানে শুধু লাভের আশায় কাজ করছে পিআইএফ৷ অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি, নতুন চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য এই তহবিল কাজে লাগানো হচ্ছে৷ তবে ভবিষ্যতে পিআইএফ আরো বেশি রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷

জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স বা এসডাব্লিউপির মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিভাগের প্রধান স্টেফান রোল জানান, মিসরের বিভিন্ন কোম্পানি কিনছে বা সেগুলোতে বিনিয়োগ করছে পিআইএফ৷ যদিও এ ব্যাপারে অস্বচ্ছতা আছে৷ তাই মিসরের সুশীল সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন রোল৷

তবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়ংয়ের মতো এসডাব্লিউপির স্টেফান রোলও মনে করছেন, এই মুহূর্তে সৌদিরা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে কম চিন্তিত৷ তাদের মূল লক্ষ্য লাভ করা৷

ইয়ং জানান, অতীতে ইউরোপ ও জার্মানিতে পিআইএফকে বিনিয়োগ করতে দেখা যায়নি৷ তবে বর্তমানে তারা গ্রিস ও জার্মানিতে বিনিয়োগের চিন্তা করছে৷ ইতিমধ্যে তারা ব্রিটেনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল নিউকাসেল ইউনাইটেড কিনেছে৷ এসডাব্লিউপি ২০১৯ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, পিআইএফ যদি ইউরোপে বিনিয়োগ করতে চায় তখন তার রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়বে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে