ইবি ছাত্রীকে হেনস্তায় বিক্ষোভ: জড়িত এক ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি

ইবি ছাত্রীকে হেনস্তায় বিক্ষোভ:  জড়িত এক ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি

ছবি- নিউজজোন বিডি

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) খালেদা জিয়া হলের সিটে উঠাকে কেন্দ্র করে আবাসিক এক জ্যেষ্ঠ ছাত্রীকে ছাত্রলীগকর্মী কর্তৃক হেনস্তার অভিযোগ উঠলে জড়িতদের বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলন করেন হলের ছাত্রীরা। এর প্রেক্ষিতে আজ (২১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ^বিদ্যালয় ও হল প্রশাসন। এসময় উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথীসহ প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রশাসনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

হলের ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ:

আলোচনাকালে হলের ছাত্রীরা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। হলটির দেড়শতাধিক ছাত্রী ওই অভিযোগে স্বাক্ষর করেন। অভিযোগপত্রে তারা ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও হলের আবাসিক ছাত্রী সৈয়দা সায়মা রহমানকে মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে তার সিট বাতিল ও বহিষ্কার দাবি করেন। একইসঙ্গে হেনস্তায় জড়িত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান হাফিজকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনাসহ তার বিচার দাবি করেন।

জড়িত ছাত্রীর সিট বাতিল:

হলের ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে ঘটনায় জড়িত সায়মাকে হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে হল প্রশাসন। এ ছাড়া হেনস্তায় জড়িত হাফিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রক্টরিয়াল বডির নিকট সুপারিশ করা হয়। এ ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটিতে মাহবুবা সিদ্দিকাকে আহ্বায়ক করে নাজমুল হুদা ও নাহিদা আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে।

পাল্টা লিখিত অভিযোগ:

এদিকে হলে সিনিয়রদের দ্বারা র‌্যাগিং ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে প্রক্টর ও প্রভোস্ট বরাবর পাল্টা লিখিত অভিযোগ করেছেন সায়মা রহমান। অভিযোগ পত্রে তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে হল প্রশাসন আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে নাজমুল হুদাকে আহবায়ক করে মাহবুবা সিদ্দিকা ও নাহিদা আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে।

উদিচী ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ:

বাংলাদেশ উদিচী শিল্পি গোষ্ঠী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক পপি আক্তারকে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগকর্মী কর্তৃক হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে ও জড়িত ছাত্রলীগকর্মী হাফিজের বিচার চেয়ে পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় উদিচী শিল্পি গোষ্ঠী ও ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসাথে ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিরাপত্তার দাবি করেন।

ছাত্রলীগের হুশিয়ারি ও আল্টিমেটাম:

দুপুর দুইটায় জুমার নামাজ শেষে বের হলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে ঘিরে ধরে কথা বলেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা কোষাধ্যক্ষের নিকট সায়মাকে হল থেকে বহিষ্কারের কারণ জানতে চান একইসঙ্গে তাকে র‌্যাগিং করা হলেও তার বিচার কেন হলোনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এসময় কোষাধ্যক্ষ হলে আন্দোলন ও ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানালে ওই ছাত্রীকে তার কক্ষে রাখতে ও র‌্যাগিংয়ের বিচার দাবিতে সব হলে একসঙ্গে আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন। একইসঙ্গে শনিবার দুপুর দুইটার মধ্যে র‌্যাগিংয়ের বিচারের জন্য সময় বেঁধে দেন তারা। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, সহসভাপতি কামরুল হাসান অনিক, ছাত্রলীগ নেতা বিপুল খান, শাহিন আলমসহ ১৫-২০ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

হল প্রভোস্টের বক্তব্য:

খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথি বলেন, ‘হলের দেড়শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষরসহ সায়মার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে লিখিত দিয়েছে। তার সিট বাতিল ও হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছে। আমরা সায়মাকে হল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি এবং হেনস্তার অভিযোগ থাকা ছাত্র মেহেদী হাসান হাফিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টরিয়াল বডির নিকট সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। অন্যদিকে সায়মা আলাদাভাবে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছে এর ভিত্তিতেও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

প্রক্টরের বক্তব্য:

প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘হেনস্তাকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হল প্রশাসন থেকে কোন লিখিত পেলে প্রশাসনের সাথে কথা বলে তদন্ত পূর্বব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কোষ্যাধক্ষের বক্তব্য:

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘নামাজ শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা হয়। তারা অপর ছাত্রীকে র‌্যাগিংয়ের বিচার কেন হয়নি এটি জানতে চায়। ওই ছাত্রী তখনো অভিযোগ না করায় এবিষয়য়ে আলোচনা হয়নি জানিয়েছি। হল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে। প্রক্টরের কাছে সুপারিশ করেছে। কদন্ত করে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে। উপাচার্য স্যার ক্যাম্পাসের বাইরে আছেন, তিনি ফিরলে তাকে বিষয়টি জানাবো।

প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগ নেতার রেফারেন্সে গণরুম থেকে দ্বিতীয় তলায় উঠেন সায়মা। সেখানে পছন্দের সিটে উঠা নিয়ে সিনিয়রদের সাথে বৃহস্পতিবার সকালে দ্বন্দ্বে জড়ায়। পরে এ বিষয়ে তার ছেলে বন্ধু ছাত্রলীগকর্মী হাফিজকে জানায়। পরে হাফিজ বিকেলে হলের সিনিয়র পপি আক্তারকে পথ রোধ করে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ। পপির সঙ্গে থাকা তার বন্ধু পথিক বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। এসময় হাফিজের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাহিন আলম ও মাসুম উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় সন্ধ্যা সাতটায় হেনস্তাকারীর বিচারের দাবিতে হলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে। পরে হল প্রভোস্টের আশ^াসে রাত পৌনে ১১টায় তারা বিক্ষোভ শেষ করেন।