কোয়ার্টার ফাইনালের আট দলের কারা কী অবস্থায় আছে

কোয়ার্টার ফাইনালের আট দলের কারা কী অবস্থায় আছে

ফাইল ছবি

কাতার বিশ্বকাপ ২০২২, অনেকের মতেই স্মরণকালের সবচেয়ে জমজমাট বিশ্বকাপ, অন্তত মাঠের খেলা তাই বলছে।

জাপান হারিয়ে দিচ্ছে জার্মানিকে, সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ক্যামেরুন বাদ পড়ার আগে ব্রাজিলকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আর মরক্কো এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। কী ছিল না এই বিশ্বকাপে? আর কী কী বাকি আছে?

বাকি আছে তৃতীয় স্থানের লড়াইসহ আটটি ম্যাচ

আর দশ দিনের মধ্যে জানা যাবে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের নাম। এখন সবাই তাকিয়ে আছে কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ?

বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ চায় লোকটা হোক লিওনেল মেসি। অনেকে বলছেন নেইমার। কেউ কেউ চান ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলোতে রোনালদোর মুখে হাসি ফুটুক। অনেক ফুটবল সমর্থক আবার চান নতুন কোনো দেশ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাক। অনেকে বলছেন আবারো এমবাপ্পে।

কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি :
আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস
ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া
ইংল্যান্ড বনাম ফ্রান্স
পর্তুগাল বনাম মরক্কো

আর্জেন্টিনায় মেসি আছেন
লিওনেল মেসি এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারদের একজন। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বিচারেও মেসির সেরা বিশ্বকাপ যাচ্ছে এবার।

আগে ফাইনাল খেলেছেন, গোল্ডেন বলও পেয়েছেন। কিন্তু এবার পেয়েছেন নক আউট পর্বে গোল। প্রতিবার মেসি বল পাচ্ছেন, কাতারের স্টেডিয়ামগুলোতে সবাই সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এই বুঝি গোল হলো, করেছেনও তিনটি ইতোমধ্যে।

এর মধ্যে মেক্সিকোর বিপক্ষে দূরপাল্লার স্বভাবসুলভ 'মেসি গোল' আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডিফেন্সভেদী এক সুন্দর গোল যে দেখে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে রিও ফার্দিনান্দ বলেছেন, মেসি অবিশ্বাস্য।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মেসি অবিশ্বাস্য কিছুই করবেন, এমন আশা সমর্থকদের। তবে মেসি বাদেও আর্জেন্টিনায় অবদান রাখছেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। ডিফেন্সে তিনি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। মাঝমাঠে কর্তৃত্ব নিয়ে খেলছেন রদ্রিগো ডি পল।

নেদারল্যান্ডস - লুই ফন হালের কৌশলী দল
দ্বিতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সহজ জয়ের পর গোটা দল হোটেলে ফিরেছে নাচের তালে তালে, তাল মিলিয়েছেন কোচও।

লুই ফন হাল শুরু থেকেই বলে আসছেন তার এই দল বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রাখে কিন্তু এটা তাদের জন্য চাপ নয়। কারণ দলটা তরুণ, তারা যা করেছে সেটাই প্রাপ্তির খাতায় থাকবে।

আসলেই তাই- কোডি গ্যাপকো এই বিশ্বকাপে তিন গোল করেছেন, তার ক্লাব পিএসভি আইন্দহোফেন এই স্ট্রাইকারের নামের পাশে দাম বাড়িয়ে ধরবে এবার।

নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্সে আছেন লিভারপুলের হয়ে সফলতা পাওয়া ভার্জিল ফন ডাইক, মাঝমাঠে আছেন ফ্র‍্যাংকি ডি ইয়ং।

নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে না এলেও এখনো পর্যন্ত প্রায় নিখুঁত খেলেছে।

কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিনটি দল কোনও ম্যাচ হারেনি- মরক্কো, ইংল্যান্ড ও ফন হালের নেদারল্যান্ডস

ব্রাজিল- ফিরছে সাম্বার ছন্দ
গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল ছিল স্বাভাবিক, যেমন থাকে ব্রাজিল। দুইটা জয়, এক ম্যাচে হার, গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেই ব্রাজিল স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলেনি কেবল, মানুষের মনে আনন্দের ছন্দও নিয়ে এসেছে।

গোল করেছে ব্রাজিল, উদযাপনে দেখিয়েছে ব্রাজিল কেন সাম্বার জন্য বিখ্যাত।

রিচার্লিসন, নেইমার, পাকোয়েতা, ভিনিসিয়াস কেউ কারো চেয়ে কম না, গোলেও, নাচেও। দক্ষিণ কোরিয়া পাত্তাই পায়নি ব্রাজিলের কাছে।

ব্রাজিলের খেলা দেখে সাবেক চেলসি স্ট্রাইকার ক্রিস সুটন বিবিসিতে লিখেছেন, ব্রাজিল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অন্যসব দলকে জানান দিল- আমরা এসেছি।

নেইমার চোট কাটিয়ে ফিরেছেন, ব্রাজিলের শক্ত ডিফেন্স এবং দুর্দান্ত এক মাঝমাঠ যেখানে ক্যাসেমিরো আছেন, তারা শক্ত চ্যালেঞ্জই জানাবে ক্রোয়েশিয়াকে।

ক্রোয়েশিয়া- আরো একবার ফাইনালের পথে?
ব্রাজিলের রদ্রিগো খুশি ক্রোয়েশিয়ার সাথে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য, ফেসবুকে জানান দিয়েছেন 'লুকা মদ্রিচ, দেখা হবে'।

ক্রোয়েশিয়া কি ততটা খুশি হতে পারছে?

কোচ জ্লাটকো ডালিচ বলছেন, 'ক্রোয়েশিয়া প্রস্তুত ভয়ঙ্কর ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামতে।' ডালিচের দল জাপানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া নক আউট পর্বের তিন ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতেই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। সেবার ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার আপ হয়েছিল লুকা মদ্রিচরা।

ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বের দ্বাদশ দল।

ডালিচ মানছেন, ব্রাজিলই ফেভারিট। কিন্তু তিনি বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই।

ব্রাজিলকে যদি হারাতে পারে ক্রোয়েশিয়া তবে সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে, আর্জেনন্টিনা অথবা নেদারল্যান্ডস।

ফ্রান্স- আবারো চ্যাম্পিয়ন? আবারো এমবাপ্পে?
টুর্নামেন্ট শুরুর অনেক আগেই নিশ্চিত পল পগবা নেই, নেই এনগোলো কান্তে। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার এক দিন আগে খবর এলো, কারিম বেনজেমা খেলতে পারবেন না। চোট পেয়েছেন ব্যালন ডি অর জয়ী তারকা। কিন্তু এসবে ফ্রান্স দলে কোনো প্রভাব পড়েনি।

পোল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয় দিয়ে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করেছে। এবারও নায়কের ভূমিকায় কিলিয়ান এমবাপ্পে। যিনি গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট দুই জায়গায়ই নিজের নাম রাখতে পারেন।

গোল করেছেন ৫টি, দ্বিতীয় রাউন্ড অব্দি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ। সেই সাথে গোল করাচ্ছেনও। আঁতোয়া গ্রিজমান আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। মাঝমাঠ তরুণ কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভালো পারফর্ম করেছে। সব মিলিয়ে ফ্রান্স এবারও ফেভারিট হিসেবেই খেলছে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

ইউরোপের দুই বড় দল এবারই প্রথম বিশ্বকাপ নকআউট ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

ইংল্যান্ড- সাউথগেট সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন?
সমালোচকদের অনেকেই ইংল্যান্ডের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেটের কোচিং-এর ধরন পছন্দ করেন না।

অনেকে বলেন রক্ষণাত্মক, অনেকে মনে করেন তিনি বিচক্ষণ নন। কিন্তু তাতে কী? সাউথগেটের মতো সফল কোচ ইংল্যান্ডে আর কে ছিলেন?

২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ইউরোর ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড সাউথগেটের অধীনে।

এবারের ইংল্যান্ড আরো ক্ষুরধার। অনেকের নজর কেড়েছেন জুড বেলিংহাম। হ্যারি ম্যাগুয়ারকে নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না অনেকে, কিন্তু ম্যাগুয়ার নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

বিবিসি স্পোর্টে এক কলামে ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার অ্যালান শিয়েরার লিখেছেন, আমার মনে হয় না, ইংল্যান্ডের ভয়ের কিছু আছে।

শিয়েরার মনে করেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতে যেতে পারে, শিয়েরারের মতে ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপের ভারসাম্যপূর্ণ দলগুলোর একটি।

মরক্কো- টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স?
মরক্কো কাতার বিশ্বকাপ যেভাবে খেলছে এবং মরক্কান সমর্থকরা যেভাবে কাতার মাতিয়ে রেখেছেন তাতে মনেই হচ্ছে মরক্কো যে এভাবে একের পর এক বড় দলকে পরাস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে, তা সবাই জানতেন।

আশরাফ হাকিমি স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই বলেছেন, চমক আরো দেখাতে চান তারা। হাকিমির জন্ম মাদ্রিদে, মরক্কোর হয়ে খেলেন উইং ব্যাকে।

তিনি আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে কার্যকর উইং ব্যাকদের একজন। হাকিম জিয়েখও খেলেন মরক্কোর হয়ে। আয়াক্স ও চেলসিতে খেলা এই প্লেমেকার ইউরোপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

স্পেনের বিপক্ষে মরক্কোর কৌশলই বলে দেয় এবারের বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের সকল শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত মরক্কো।

স্পেন ৯০০ এর বেশি পাস দিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচে, মরক্কো দিয়েছে ২১৬টি, স্পেনের বলের পেছনে ছোটেনি মরক্কান ফুটবলাররা।

তারা অপেক্ষা করেছিলেন, বল এলে খেলবেন।

এটা ১২০ মিনিট কাজে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে নায়ক বনে গেছেন মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বুনো, তিনি স্পেনের ক্লাব সেভিয়ার হয়ে খেলেন।

কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর প্রতিপক্ষ পর্তুগাল।
সূত্র : বিবিসি