রোনাল্ডোর পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে মরক্কো

রোনাল্ডোর পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে মরক্কো

সংগৃহীত

বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস রচনা করল মরক্কো। দশ জনের দল নিয়ে শক্তিশালী পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকার কোন দেশ হিসেবে সেমি-ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে এটলাস লায়ন্সরা।  কাতার বিশ্বকাপের  কোয়ার্টারফাইনাল ম্যাচের ৪২তম মিনিটে উত্তর আফ্রিকান দেশটির হয়ে জয়সুচক একমাত্র গোলটি করেছেন ইউসেফ এন-নেসরি। তার গোলে  চোখের জলে বিদায় নিতে হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে।

আগের ম্যাচ থেকে একটি পরিবর্তন নিয়ে আজ একাদশ নামায় পর্তুগাল। উইলিয়াম কারভালহোর পরিবর্তে দলভুক্ত হন রুবেন নেভেস। মরক্কোর একাদশে আসে দুটি পরিবর্তন। নায়েফ আগুয়াড ও নুসাইর মাজরাউয়ি’র পরিবর্তে একাদশভুক্ত হন জাওয়াদ এল ইয়ামিক ও ইয়াহিয়া আতিয়াত আল্লাহ।

টুর্নামেন্টে অদম্য আক্রমনকারী দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল পর্তুগাল। আগের চার ম্যাচ থেকে তারা ১০ গোল করেছে। অপরদিকে মরক্কো এই পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি গোল হজম করেছিল, তাও আবার নকআউট পর্বে। সেই হিসেবে আজকের ম্যাচটির শিরোনাম ছিল ‘আক্রমন বনাম রক্ষন’।

আল থুমামা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে প্রথম আক্রমনটি রচনা করে শিরোনামের মর্যাদা রেখেছে পর্তুগাল। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমনটি রচনা করে তারাই। বাঁ প্রান্ত থেকে পাওয়া ক্রসে দারুন এক হেড করেছিলেন মরক্কান বক্সে অবস্থান নেয়া হুয়াও ফেলিক্স। কিন্তু অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ওই ফরওয়ার্ডের ডাইভিং হেডের বলটি চমৎকার ভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন মরক্কোর গোল রক্ষক ইয়াসিন বোনো। দুই মিনিট পর প্রতিআক্রমনে যায় মরক্কো। কর্নার থেকে পাওয়া বলে জোড়ালো শট নেন ইউসেফ এন-নেসরি, গোলের ভালো সুযোগ ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বল মাঠের বাইরে চলে যায়। এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রন অনেকটাই দখলে নিয়ে নেয় পর্তুগাল। ১৫ মিনিটে রাফায়েল গুয়েরেইরো এবং  ১৮ মিনিটে গনসালো রামোস সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। অবশ্য ২০ মিনিটে চেলসি উইঙ্গার হাকিম জিয়েচের কাট ব্যাকটি ছিল অসাধারণ। কিন্তু তার শটের বলটি পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।

এই পর্যায়ে পথম ২০ মিনিটের বল পজিশনে দেখা যায় এটলাস লায়ন্সদের চেয়ে ঢের এগিয়ে পর্তুগাল। ৭৩শতাংশ দখল বজায় রেখেছিল  ইউরোপীয় জায়ান্টরা। ২৬ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেস দারুন একটি হেডে বল জালে জড়ানোর আগেই সেটি গ্রিবে পুরে নেন মরক্কান গোলরক্ষক।  ৩৩ মিনিটে ফেলিক্সের আক্রমনটি ব্যর্থ হয়। এরপর অবশ্য এটলাস লায়ন্সদের বেশ কয়েকটি প্রতিআক্রমন রীতিমত  ভিতি ছড়িয়ে দেয় পর্তুগাল শিবিরে।  ৩৭ মিনিটে হাকিমি ও বাডার বেনুন কম্বিনেশনে চালানো আক্রমন থেকে দারুন ভাবে বল পাঠানো হয় পর্তুগাল বক্সে। কিন্তু সেখানে থাকা  সেলিম আমাল্লাহর শটের বল ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। তবে ৪২ মিনিটে ঠিকই গোল পেয়ে যায় মরক্কো। বাঁ প্রান্ত থেকে ইয়াহিয়া আতিয়াত আল্লাহ’র ক্রসে অসাধারন হেডে গোল করেন এন-নেসরি। ফলে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মরক্কো।              

এর আগে দুইবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল মরক্কো ও পর্তুগাল। দুইবারই বিশ^কাপে। ১৯৮৬ মেক্সিকো টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে প্রথম দেখায় ৩-১ গোলে জয়লাভ করেছিল মরক্কো। আর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত গত আসরে মরক্কোকে ১-০ গোলে হারিয়ে ওই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয় পর্তুগাল।

পর্তুগালের গনসালো রামোস হচ্ছেন প্রথম কোন ফুটবলার যিনি প্রথমবার বিশ^কাপ খেলতে এসেই হ্যাট্রিক করেছেন। এর আগে ২০০২ সালে জার্মানির হয়ে একই রকম মাইলফলক স্পর্শ  করেছিলেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। আজও রোনাল্ডোকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হয়।  এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ^কাপে  সেরা একাদশের  বাইরে থাকতে হলে  রোনাল্ডোকে।

বিরতি থেকে ফিরে পর্তুগাল আক্রমনের ধার বাড়ালেও জোড়ালো সুযোগ সৃস্টি করতে পারেনি তারা। বিপরিতে ৫১ মিনিটে আরো একটি গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। জিয়েচের ক্রস থেকে বক্সে লাফিয়ে উঠে বলে মাথার ছোয়াঁ লাগিয়েছিলেন সতীর্থ জাওয়াদ এল ইয়ামিক। কিন্তু দারুন দক্ষতায় বলটি লুফে নেন পর্তুগাল গোল রক্ষক দিয়োগো কস্তা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে রুবেন নেভেসের বদলী হিসেবে মাঠে নামেন পর্তুগাল সুপার স্টার পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অঁর খেতাব জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। তাবে মাঠে আলাদা করে চেনা যায়নি তাকে।  

ম্যাচের ৭২ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেসের বুলেট গতির শট ক্রস বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ৮৪ মিনিটে হুয়াও ফেলিক্সের শটও লক্ষ্যভ্রস্ট হয়। ৮৭ মিনিটে আন্দ্রে সিলভা বক্সের কাছে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে আট মিনিটের ইনজুরি টাইমে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ম্যাচে। এর আগে ৯২ মিনিটে গোলের একটি সুযোগ সৃস্টি করেন রোনাল্ডো। তবে তিনি বলে শট নেয়ার আগেই সেটি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন মরক্কান গোল রক্ষক । পরের মিনিটে দুটি হলুদ কার্ডের সুবাদে লাল কার্ড নিয়ে মাঠ ছাড়েন মরক্কোর ওয়ালিদ চেদিরা। এতে দশ জনের দলে পরিণত হয় মরক্কো। কিন্তু তাতেও গোল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় পর্তুগাল। শেষ পর্যন্ত  ১-০ গোলে পরাজয় মেনে মাঠ ছাড়ে রোনাল্ডোর দল। অপরদিকে প্রথম কোন আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা  বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠে  নতুন এক ইতিহাস রচনা করে মরক্কো।