পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শত রোগী, বাড়ছে শিশুরোগ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শত রোগী, বাড়ছে শিশুরোগ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শত রোগী, বাড়ছে শিশুরোগ

আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে পাবনা অঞ্চলে বাড়ছে শিশুরোগ। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য হাসপাতালগুলোতে বলতে গেলে ঠাঁই নেই।বিশেষ করে শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাবনায় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। পাবনা জেনারেল  হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে এসব রোগীর চাপ।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে গেল এক সপ্তাহ যাবত প্রতিদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৯০ থেকে ১শ’ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। শয্যা না পেয়ে ঠান্ডার মধ্যে হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অধিক রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।

দুবলিয়া এলাকার ছোয়াত নামে এক শিশুর মা বলেন, তার বাচ্চার বয়স ১৯ মাস। কয়েক দিন আগে ঠান্ডা লেগেছিল। তারপর ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। তাই ভর্তি করেছি। রোগীর চাপ বেশি থাকলেও নার্সরা খুবই আন্তরিক। বাচ্চা আগের চাইতে কিছুটা ভালো আছে। টেবুনিয়া থেকে দুই বছর বয়সী শিশু মিমকে নিয়ে এসেছেন সুরুজ আলি। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাচ্চার পাতলা পায়খানা ও সর্দি জ্বর হয়। পরে তিন দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হই। পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি এলাকার এক মহিলা ডায়রিয়া রোগী বলেন , ‘হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে আমার পেটের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শেও কোন কাজ না হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডায়রিয়া ঠিক হওয়ার কোন লক্ষণই পাচ্ছি না।’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিঘলগাছির মোজাহার বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দু,দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। খাবার স্যালাইন ঠিকমত দেওয়া হলেও অন্যান্য স্যালাইন আমরা পাচ্ছি না। এই ছোট্ট রুমে এত মানুষ! রোগ ঠিক হওয়া তো দূরের কথা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না।সমস্যা আরো- এত পুরুষ মানুষএর জন্য মাত্র একটা টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।

ডায়রিয়া ওয়ার্ড এর ইনচার্জ নুরুন নাহার বলেন, কিছুদিন ডায়রিয়া ওয়ার্ড এর কলেরার স্যালাইন সরবরাহ ছিলনা। ডায়রিয়া ওয়ার্ড এর জন্য নির্দিষ্ট ডাক্তার নেই। মেডিসিন বিভাগ ও শিশু ওয়ার্ড এর ডাক্তার এই ওয়ার্ড দেখেন। এই ওয়ার্ডও পরিচালিত হয় মেডিসিন বিভাগ ও শিশু ওয়ার্ড থেকে। আমরা শুধু তাদের সেবা বা নিয়ম অনুসারে সব ওষুধ স্যালাইন এই গুলো দিয়ে থাকি। যদিও বর্তমানে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে, তবে তো সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না । বেড অনুসারে ওষুধ সরবরাহ হয়ে থাকে। ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড এ এখন রোগী ভর্তি রয়েছে নব্বই এর বেশি। আমাদের কিছু করার নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের দিলে আমরা সবাইকে দিতে পারবো।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোঃ ওমর ফারুক মীর বলেন, ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। শয্যার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত রোগী এলেও আমরা কোনো রোগীকে ফিরিয়ে না দিয়ে ভর্তি করে সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপে কোনও ওয়ার্ডেই নির্ধারিত শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি বা চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। ১২০ বেডের চিকিৎসক দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও আমরা এই সীমিত ব্যবস্থার মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য ব্যায়াম করানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন,‘জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও সেখানে বাড়তি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ডায়রিয়া রোগের ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তাদের হাসপাতালে আনতে দেরি করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের মত, শিশুদের বাইরে কম বের করতে হবে, বেশিরভাগ সময় বাসায় রাখতে হবে, নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, ঘরে তৈরি খাবার দিন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং পঁচাবাসি খাবার পরিহার করতে হবে।