সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র‍্যাবের বিশেষ অভিযান

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র‍্যাবের বিশেষ অভিযান

ছবি- নিউজজোন বিডি

জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা।

শনিবার দপুর থেকে লং রেঞ্জ পেট্রোলের মাধ্যমে একটি বিশেষ অভিযানিক দল ‘এলিট টাইগার্স’ ট্রলারযোগে সুন্দরবনে প্রবেশ করে।

এ অভিযানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক নব্য বনদস্যুদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য নৌ-পুলিশ, বন বিভাগ এবং কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, মাঠ পর্যায়ে সুন্দরবনে অভিযান পরিচালনার স্থান রেকি করা, আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে র‍্যাব-৬ এর পক্ষে জানানো হয়েছে।

র‌্যাবের আভিযানিক দলটি সুন্দরবনের শরণখোলা, জয়মনি, বড়ইতলা, আন্ধারমনিক, মৃগামারি এলাকাসহ বনের শ্যালা নদীর বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালাবে। এছাড়া অভিযানের জন্য র‌্যাবের আরেকটি দলকে একটি স্পিডবোট ও বেঙ্গল টাইগার্স নামে অপর একটি ট্রলারসহ পূর্ণপ্রস্তুতি সহকারে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

তিন দিনের এ বিশেষ অভিযান প্রয়োজনে বাড়ানো হবে বলে র‌্যাব ।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে র‌্যাব অনেক ঘাম ঝরিয়েছে, কষ্ট করেছে। যে কোনো মূল্যে সুন্দরবন যেন দস্যুমুক্ত থাকে, দস্যুদের পুনরাবৃত্তি যেন ওই এলাকাতে না ঘটে সেজন্য আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হবে, সেই মূলমন্ত্রকে নিয়ে আমরা অভিযানগুলো পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোতে ১০ থেকে ১৫ জন অপহৃত হয়েছিল। আমাদের চার থেকে পাঁচটি টহল টিম এবং গোস্টগার্ডের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। তখন তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। অনেকে মুক্তিপণ দিয়ে আসছিল, আবার অনেকে পরবর্তীতে আমাদের আনাগোনা দেখে চলে আসে। বিষয়টি মিডিয়াতে আসে এবং যারা জেলে তারাও ভয় পায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্দরবন এলাকা দস্যু মুক্ত করা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি তারই আলোকে কাউকে যদি আটক করতে পারি তাও করা হবে। আর জেলেদের অভয় দেয়া যে আমরা আছি আপনাদের পাশে। কোনো দুস্কৃতিকারী বা জলদস্যু যেন ক্ষতি করতে না পারে র‌্যাব সব সময় বলবৎ থাকবে। তারা এমন কোনো পরিস্থিতিতে না পড়ে সেই উদ্দেশ্যেই আমরা অভিযান শুরু করেছি।

সুন্দরবনে পূর্বের কোনো দস্যুবাহিনী নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন দুষ্টলোক বা জেলেদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের জন্য বা অপহরণ করে টাকা পয়সা আদায়ের জন্য দস্যু হওয়ার পরিকল্পনা করছে। নব্য জলদস্যু বলা যেতে পারে। আর পুরাতন যারা তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে আমাদের। তাদের মামলা, পুনর্বাসনসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আমরাই দেখভাল করি। তাদের দুঃখ-কষ্টসহ অন্যান্য বিষয় বিশেষ করে র‌্যাব-৬ দেখে থাকে। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেই অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন কিছু লোকজন র‌্যাবের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু আমরা কোন অবস্থাতেই সেটি করতে দিব না।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত তিন-চার দিন অভিযান পরিচালনা করবো। প্রয়োজনে আরও সময় বাড়িয়ে নেবো। সুন্দরবন সার্বক্ষণিক আমাদের নজরদারীর মধ্যে থাকবে। যাতে করে জেলেরা যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য যায় তারা যেন নির্বিঘ্নে তাদের কার্যকলাপ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে নয়ন বাহিনী নামের একটি নব্য বনদস্যু দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বেড়ির খাল ও হরমাল খাল এলাকা থেকে ১৫ জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে।

অপহরণের ছয় দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে দস্যুদের কবল থেকে অপহৃত জেলেরা ছাড়া পায়।

সূত্র: ইউএনবি