পরকালের জবাবদিহিতা

পরকালের জবাবদিহিতা

পরকালের জবাবদিহিতা

একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা অত্যাবশ্যক তার অন্যতম হলো- পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। পরকালের প্রতি বিশ্বাস একজন মানুষকে সব রকম পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। মানুষ যত বেশি দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে পড়বে, তত বেশি আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরে যাবে। বিভিন্ন রকম গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়বে। এসব কার্যাবলি থেকে তাকে কেবল পরকালের প্রতি জবাবদিহিতার ভয় বাঁচিয়ে রাখতে পারে। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং পরকালের জীবন চিরস্থায়ী। যে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘আখিরাতের জীবন সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী’ (সূরা আলা-১৭)।

দুনিয়ার জীবনে যারা একবার শুভাগমন করবে- তাদের প্রত্যেককে পরকালে ফিরে যেতে হবে। পরকাল হলো প্রতিটি মানুষের আসল ঠিকানা। যে ঠিকানায় প্রতিটি মানুষের যাত্রা করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমরা এই ধারণা পোষণ করিও না যে, আমি আল্লাহর কাছে তোমরা ফিরে আসবে না’ (সূরা মুমিনুন-১১৫)।

আখিরাতে প্রতিটি মানুষের প্রকৃত সফলতার মানদণ্ড প্রকাশিত হবে। কে কত বড় সফল তা কেবল পরকালের জবাবদিহির পর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমেই বোঝা যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরপর যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতি হয়ে যাবে, সে-ই প্রকৃত সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান-১৮৫)।
দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবন- দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা জগৎ। একজন মানুষ দুনিয়ার জীবনে যা যা করবে, সেসব জবাবদিহি করার কেন্দ্রস্থল হলো পরকাল। আখিরাতে দু’টি জিনিস থাকবে। এক. কঠিন শাস্তি। দুই. আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্ষমা। যাদের বিষয়ে কঠিন শাস্তির বিধান জারি হবে- তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর যারা আল্লাহর ক্ষমা পাবে- তাদের ঠিকানা হবে জান্নাত।যারা পরকালের প্রতি অবিশ্বাসী হবে, দুনিয়ার জীবন প্রাধান্য দেবে- জাহান্নাম হবে তাদের আবাসস্থল।

পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর কাছে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং নিজেদের প্রবৃদ্ধির চাহিদানুযায়ী চলাফেরা করাকে পরিহার করে, তাদের ঠিকানা হবে জান্নাত (সূরা ইউনুস-৭)।

একজন মানুষ দুনিয়ার পেছনে যত বেশি ছোটাছুটি করুক আখিরাতের জীবন পরিহার করুক, দুনিয়া তার কাছে ততটুকুই ধরা দেবে। যতটুকু তার নসিবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বরাদ্দ করে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে দুনিয়ার জীবন কামনা করে, আমি তার জন্য যতটুতু ইচ্ছা করি ততটুকুই দিয়ে থাকি। পক্ষান্তরে যারা আখিরাত কামনা করে ও তার পেছনে ছোটাছুটি করে- আমি তাদের আশানুযায়ী সন্তুষ্ট করে থাকি’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১৮-১৯)।

দুনিয়ার জীবনের সুখ-শান্তি স্থায়ী নয়। আবার সারা জীবন সুখী হওয়া সম্ভবও নয়। যে জীবনে রয়েছে সব রকমের পরীক্ষা। আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট এ সবের ব্যাপক সমাহার রয়েছে দুনিয়ার যাপিত জীবনে।

একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে মুমিন হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না, যতক্ষণ না সে পরকালের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করবে! আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং যারা পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপ করে’ (সূরা বাকারা-৪)।
পরকালের ভয়ভীতি মানুষকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পূর্ণ সহায়তা করে। যার সামনে আল্লাহর উপস্থিতি জানা রয়েছে, পরকালে তাঁর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহির ভয় রয়েছে, দুনিয়ার যাপিত জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝা রয়েছে। সে কখনো আল্লাহর অবাধ্যতায় জড়াতে পারে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি তোমাদের জীবন ও মরণ বানিয়েছি তোমাদের পরীক্ষার জন্য’ (সূরা মুলক-২)।
আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার জীবন পরীক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বানিয়েছেন। যাতে সে এ জীবনে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে পরকালে নাজাতের ওসিলা হতে পারে।

দুনিয়ার জীবন আল্লাহর কাছে সামান্য পরিমাণ মূল্য নেই। আল্লাহর রাসূল হাদিসে নববীতে বলেন, ‘যদি দুনিয়া আল্লাহর কাছে মশার পাখার পরিমাণও দাম হতো, তাহলে তিনি এখানকার পানির এক ঢোঁকও কাউকে পান করাতেন না’ (ইবনে মাজাহ-৪১১০)।

সুতরাং প্রতিটি মানুষের আখিরাতের জীবন প্রাধান্য দেয়া উচিত। যে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। সে জীবনের জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দুনিয়ার জীবনের চেয়ে পরকালের জীবন প্রাধান্য দেয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক