মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : পঞ্চগড়ে টানা ৩দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : পঞ্চগড়ে টানা ৩দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : পঞ্চগড়ে টানা ৩দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

শীতপ্রবণ জেলা বা হিমালয়ের কোল ঘেষা জেলা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গত তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। বাড়ছে শীতের তীব্রতাও।

রবিবার (১ জানুয়ারি ) সকাল ৯ টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।গত শুক্রবার ও শনিবারও এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

সন্ধ্যা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত উত্তরের হিমেল হওয়া ও ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করছে। সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে চারদিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাও কেটে যাচ্ছে। সকাল পর্যন্ত যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে সাবধানে চলাচল করছে।শীতের এসময়টাতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে রিকশা-ভ্যান, অটো চালক, দিনমজুর খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। সকালে তারা কাজে যেতে পারছে না। কনকনে ঠাণ্ডার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। দৈনন্দিন আয় রোজগার কমে গেছে।

শীতবস্ত্রের অভাবে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অসহায় মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সামর্থ্যবানরা লেপ-তোষক বানালেও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।শীত ও শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোতে বয়স্ক ও শিশু রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন শীতার্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কাছে কম্বল বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।জেলা শহরের ভ্যান চালক আনারুল জানান, সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। সকালে বাড়ি থেকে বের হলেও রাস্তাঘাটে লোকজন না থাকায় আয় রোজগার নাই। খুব বিপদে আছি।

জেলার সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার বক্কর জানান, বাতাস আর কুয়াশার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারি না। বাইরে বের হলে ঠান্ডা লাগে। কাম কাজ নাই। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছি।জেলার সদর উপজেলার ধাক্কামারা এলাকার দিনমজুর সোহরাব আলী জানান, ঠাণ্ডার কারণে সকালে বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। বাজারে এসে কাজও পাচ্ছি না। কাজ না করলে খাবো কিভাবে?

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. তৌফিক আহমেদ জানান, হাসপাতালের ১০০ শয্যার বেডে এখন রোগী ভর্তি রয়েছে ১৬৪ জন। ফলে অনেক রোগীকে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত রোগীও রয়েছে।শিশু ও বৃদ্ধদের এই সময়ে উষ্ণ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন জানান, উত্তরের হিমেল বাতাসে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আজকে সকাল ৯ টায় তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ও শুক্রবার এখানে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঘনকুয়াশা বাড়লে কোন কোন সময় তাপমাত্রা বেড়ে যায়।আবার যখন আকাশ পরিস্কার থাকে কুয়াশা থাকে না হিমালয়ের হিমেল বাতাস সরাসরি এই এলাকায় প্রবাহিত হয় তখন তাপমাত্রা নিচে নেমে যায়। বর্তমানে এখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

সূত্র : ইউএনবি