স্বামীর মতো একইভাবে প্রাণ হারালেন কো-পাইলট অঞ্জু

স্বামীর মতো একইভাবে প্রাণ হারালেন কো-পাইলট অঞ্জু

স্বামীর মতো একইভাবে প্রাণ হারালেন কো-পাইলট অঞ্জু

নেপালে রবিবারের বিমান দুর্ঘটনায় যে কো-পাইলট নিহত হয়েছেন, ১৬ বছর আগে এই একই ধরনের দুর্ঘটনায় তিনি তার স্বামীকেও হারিয়েছেন।ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৬৯১ যখন পর্যটন শহর পোখারার কাছে একটি গিরিসঙ্কটে বিধ্বস্ত হয় তখন অঞ্জু খাতিওয়াদা ছিলেন সহকারী চালকের আসনে।

এই দুর্ঘটনায় বিমানের সব আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটিতে গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা।অঞ্জুর স্বামী দীপক পোখরেলও এই একই এয়ারলাইন্সের কো-পাইলট ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় তিনিও ছিলেন ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইটের সহকারী চালক।বিমান দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর পর অঞ্জু নিজেও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

স্বামীকে হারিয়ে বিহ্বল অঞ্জু বেঁচে ছিলেন তার এক কন্যাকে নিয়ে। পরে তার শোক তাকে পাইলট হওয়ার ব্যাপারে শক্তি যোগাতে থাকে।“তিনি ছিলেন একজন দৃঢ় সঙ্কল্পের নারী, যিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি তার স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন,” বলেন অঞ্জুর পরিবারের এক সদস্য সন্তোষ শর্মা।

স্বামী দীপক ছিলেন টুইন ওটার প্রপ প্লেনের কো-পাইলট। চাল ও খাদ্য নিয়ে বিমানটি পশ্চিমাঞ্চলীয় জুমলা শহরে যাওয়ার সময় তিনি এর ককপিটে ছিলেন।২০০৬ সালের জুন মাসে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে গেলে তিনিসহ আরোহী ন’জনের সবাই প্রাণ হারান।

এই দুর্ঘটনার চার বছর পর অঞ্জু যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেন, এবং উত্তীর্ণ হওয়ার পরে যোগ দেন তার স্বামী যে ইয়েতি এয়ারলাইন্সে কাজ করতেন সেই এয়ারলাইন্সে।ইয়েতি এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যে ছ’জন নারী কাজ করতেন - অঞ্জু ছিলেন তাদের একজন। তিনি প্রায় ৬,৪০০ ঘণ্টা বিমান উড়িয়েছেন।

“তিনি এই এয়ারলাইনের একজন ফুল ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি একাও বিমান চালিয়েছেন,” বলেন ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সুদর্শন বার্তাওলা। “তিনি ছিলেন একজন সাহসী নারী।”পরে অঞ্জু আবার বিয়ে করেন। পাইলট হিসেবে কেরিয়ার গড়ে তোলার সময় তার দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়।অঞ্জুর বন্ধু বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে তিনি তার কাজকে খুব ভালোবাসতেন। তার উপস্থিতিও ছিল আনন্দের। কিন্তু তিনি ও তার প্রথম স্বামীর একইভাবে প্রাণহানি নিদারুণ মর্মান্তিক ঘটনা।

পোখারার যেখানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই সেতি নদীর দুই তীরে বিমানটির বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখলে মনে হয় ভেঙে যাওয়া একটি খেলনার টুকরোগুলো পড়ে আছে।বিমানের ছোট্ট একটি অংশ পড়ে আছে গিরিখাতে। জানালাগুলো অক্ষত। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সবুজ ও হলুদ রঙ এখনও স্পষ্ট দেখা যায়।

সবশেষ এ দুর্ঘটনার পর হিমালয়ের এই দেশটির বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও কথাবার্তা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় কয়েকশ' মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।গত কয়েক বছর ধরেই নেপালের এসব দুর্ঘটনার জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। পার্বত্য এলাকা এবং হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যাওয়া আবহাওয়াকে প্রায়শই এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।তবে অনেকে এর জন্য সেকেলে বিমান, আইন-কানুনের অভাব এবং ঠিক মতো নজরদারি না করাকেও দায়ী করে থাকেন।

রবিবার ঠিক কী কারণে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তার কারণ এখনও পরিষ্কার নয়।দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মীয় স্বজনরা নিহতের মৃতদেহ সংগ্রহের জন্য পোখারার হাসপাতালের বাইরে জড়ো হয়েছেন।পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হওয়ার পরেই নিহতদের পরিবারের কাছে এসব মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।

জানুয়ারির তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়েছিলেন ভীমসেন বান। তিনি এসেছেন তার বন্ধু নীরার মৃতদেহ নেওয়ার জন্য। আশা করছেন তিনি নীরাকে তার বন্ধুর গ্রামে নিয়ে গিয়ে সেখানে শেষকৃত্য আয়োজন করতে পারবেন।একুশ বছর বয়সী নীরা চানতল একজন শিল্পী। তিনি প্রায়শই ইয়েতি এয়ারলাইন্সে চলাচল করতেন।

টিকেটের দাম কম হওয়ার কারণে দেশটির মধ্যবিত্ত লোকজনের কাছে স্বল্প খরচের এসব বিমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।সঙ্গীতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য নীরা কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাচ্ছিলেন।“তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। তিনি প্রাণ খুলে লোকগীতি গাইতেন,” বলেন ভীমসেন। এসময় কান্নায় তার চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল।“এই ক্ষতি বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই।”

সূত্র : বিবিসি