পাবনায় পাখি শিকারে বাধা দেয়ায় বেধড়ক মারধর

পাবনায় পাখি শিকারে বাধা দেয়ায় বেধড়ক মারধর

পাবনায় পাখি শিকারে বাধা দেয়ায় বেধড়ক মারধর

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে মুন্নাহ আহমেদ খোকন তার উপর হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে  পেটানোর নির্মমতার কথা বলার সময় মনে প্রচন্ড আক্ষেপ, অভিমান, হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাখি শিকারে বাধা দেয়ার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে হাসপাতালে বেডে শুয়ে খোকনের। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ, আশপাশ যেন ভয় ও ভীতি ঘিরে রেখেছে। আক্ষেপে বলেই ফেললেন মহান সৃষ্টিকর্তাও যেন তার পাশে নেই! তাই বিচার চাওয়া তো দূরের কথা প্রাণভরে কাঁন্নাটাও তার জন্যে আতঙ্কের ও ভয়ের। মনের আর্তনাদ বুকের মধ্যে চাপা দিয়েই পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ব্যাকুল মুন্নাহ আহমেদ খোকন।

খোকনের এই পরিণতি হয়েছে বন্যপ্রাণি রক্ষা করতে গিয়ে। তার অপরাধ তিনি ঈশ্বরদীর ধনীর দুলালী এক শিল্পপতির ছেলে ও তার সহযোগিদের পাখি শিকার করতে বাধা দিয়েছেন।  এজন্য তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে, হাথুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়; হাসপাতালের ভেতর-বাইরে ব্যাপক নজরদারি সেই ধনীর দুলালীর সহযোগিদের, যেন খোকন প্রতিবাদের জন্য মুখটাও খুলতে সাহস না পান, কাঁন্নাটাও যেন করতে না পারেন। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ বলছে-তারা অভিযোগ পায়নি।

আহত মুন্নাহ আহমেদ খোকন পাবনার ঈশ্বরদীর সীমান্তবর্তী নাটোর জেলার লালপুর থানার  মাঝপাড়ার গ্রামের মৃত মনির উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে। পেশায় পল্লী বিদ্যুতের ফোরম্যান।  স্ত্রী, ৮ বছরের কন্যা ও ৫ বছরের শিশু ছেলে নিয়ে খোকনের নিম্ন আয়ের সংসার।

পরিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঈশ্বরদীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরআরপি গ্রুপের মালিক মুনসুর আলমের ছেলে রফিকুল আলম রফিক ও তার সহযোগিতারা মাঝগ্রামে ঘুঘু পাখি শিকার করতে গিয়েছিলেন। এসময়  খোকন তাদের বন্যপ্রাণী শিকার করতে নিষেধ করেন এবং বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন রফিক ও তার সহযোগিরা।   সেই ঘটনার জেরে ২৩ জানুয়ারি বিকেলে লালপুর থেকে ফেরার পথে একদল যুবক তাকে তুলে নিয়ে আসেন ঈশ্বরদীতে। সেখানে আরআরপি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের পেছনে নিয়ে গিয়ে হাথুরি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করেন।

খোকনের অভিযোগ-এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা মামলা নেয়নি। উল্টো রফিকের লোকজন হাসপাতাল ও তার বাড়ির আশপাশে কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন। যেন সাংবাদিকসহ কেউ যেন তার সঙ্গে কথা বলতে না পারেন। তাই আক্ষেপ করেই খোকন বলেন-‘আমার সাথে শুধু প্রশাসন কেন, মহান আল্লাহও নেই’। তাই কারো কাছে বিচারও চাইনি। কিসের আইন, কিসের প্রশাসন। সব তো ওরাই।’

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রফিকুল আলম রফিক। তিনি বলেন,‘বেশ কিছুদিন আগে খোকনের সঙ্গে ওই এলাকায় কিছু লোকের পাখি শিকার করা নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছিল। এসময় আমি আসার পথে সেখানে এগিয়ে গিয়েছিলাম, এইটুকু...। তারপর ওই দিনের পর থেকে খোকনের সঙ্গে আমার কোনও কথা নেই, দেখাও নেই। এখন কিভাবে কারা তাকে মারধর করলো আমি জানি না।’

এবিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। খোকন নামের  কেউ অভিযোগ দিয়েছে কিনা সেটাও জানি না। দিলেও আমি এখনও পর্যন্ত জানি না।’ এখন অনেকের প্রশ্ন থানার সর্বময় ক্ষমতাবান ওসি বিষয়টি জানেন না-এটাকী বিশ্বাসযোগ্য!